১৬ বছর ধরে যে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন নাজিম
‘শরীরে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে আজও বেঁচে আছি। এ ব্যথা আর সহ্য করার মতো নয়। রাতে ঘুমাতে পারি না। দুইবার অপারেশনের পরও শরীরে এখনো অনেক স্প্লিন্টার রয়ে গেছে।’ এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত নাজিম উদ্দিন।
১৬ বছর আগের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে গতকাল বৃহস্পতিবার নাজিম উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাই, সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আমার হৃদয় কেঁপে উঠে। ওই দিনের ঘটনার পর বেঁচে যাব, এটা আমার পরিবারের কেউ ভাবেনি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা সম্পূর্ণই আল্লাহর মেহেরবানি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সেদিন ২৪ জন নিহত ও কয়েকশ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছিল।
নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি হাজারো কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কারণ তিনিই আমাকেসহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর কয়েকজনকে ঘটনার পর পরই ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এরপর তিনি সেদিনের আহতদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মিরারচর গ্রামের মফিজ উদ্দিন মেম্বারের ছেলে আওয়ামী লীগকর্মী নাজিম উদ্দিন। তিন সন্তান, স্ত্রী ও ভাই-বোন নিয়ে তাঁর পরিবার।
সেদিনের ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে আহত নাজিম উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিকেল ৩টায় আমি ঢাকার জনসভায় পৌঁছি। জিল্লুর রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ও আমার এলাকা ভৈরবে। জনসভা শুরু হলে জিল্লুর রহমান ট্রাকের ওপর শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। আইভী রহমান ট্রাকের সামনে মহিলাদের নিয়ে মাটিতে বসেছিলেন। আমি ছিলাম তাঁর কাছে। আইভী রহমান পানি চাইলে আমি দোকান থেকে এক বোতল পানি এনে দেই। শেষদিকে শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ কয়েকটি বিকট শব্দ, সঙ্গে সঙ্গে জনসভা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। এ সময় গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আমি গুরুতর আহত হই। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।’
পরে নাজিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে অনেকেই মৃত ভেবেছিলেন। পরে হঠাৎ তাঁর জ্ঞান ফেরে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শেখ হাসিনা নাজিমকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠান। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর বুকে ও পায়ে কয়েকদফা অপারেশন করা হয়েছে। এতেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন।
নাজিম জানালেন, শীত এলে দেহে স্প্লিন্টারের কারণে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। আবার গরমে রোদে যেতে পারেন না। সামান্য চুলকানিতে শরীর দিয়ে রক্ত ঝরে। এজন্য তার আরো চিকিৎসার প্রয়োজন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
নাজিম উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমার এখন সু-চিকিৎসার দরকার, যা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ করাবেন না। কারণ এত দিনেও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ আমার খবর নেয়নি।’