১৬ মাসেও হয়নি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

Looks like you've blocked notifications!

দীর্ঘ ২৭ বছর পরে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের ভোটে ফজলুর রহমান খোকনকে সভাপতি ও ইকবাল হাসান শ্যামলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর তিন মাস দুই দিন পর ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি খোকন-শ্যামল। এ ছাড়া সহ-দপ্তর সম্পাদক দিয়েই চালানো হচ্ছে সংগঠনের দাপ্তরিক কার্যক্রম।

কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর সারা দেশের ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাতে কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু তৃণমূল ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা শুরু হয়। কোথাও স্বজনপ্রীতি, আবার কোথাও আর্থিক লেনদেনের গুরতর অভিযোগ ওঠে ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে।

এদিকে বিগত ১৬ মাসে বেশ কয়েকবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের বিষয়টি আলোচনায় এলেও অজানা কারণে সেটি থেমে যায়। তবে গত ২২ ডিসেম্বর ছাত্রদলের ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর বলা হয়েছিল, দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। কিন্তু ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটির গঠনের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।

অন্যদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ‍যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ঝলক। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির গঠনের পর দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ফেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিলের পর ১৬ মাস চলে গেলেও এখনও সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না। আমাদের কমিটিতে পদ পদবি বিষয় না। আমরা একটা সঠিক সমাধান চাই, মূল্যায়ন চাই। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমানের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের একটি সঠিক সমাধান করে দিন।’

মিয়া মোহাম্মদ ঝলক বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার কমিটি করে দেওয়ার জন্য বললেও বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কমিটি করতে বিলম্ব করছেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজ এ কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছি।’

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ আর আট মাস বাকি রয়েছে, এর মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করা হলে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে জানতে চাইলে মিয়া মোহাম্মদ ঝলক বলেন, ‘আমরা বর্তমান কমিটির ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। তাদের নেতৃত্বে আমরা ভরসা রাখি। আমাদের আন্দোলন কারো বিরুদ্ধে নয়, আমরা শুধু আমাদের দাবি-দাওয়া পেশ করলাম। তারা চাইলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটা সমাধান করতে পারে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে তা ঠিক। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাস পরই করোনা চলে আসে। এর পরই তো সব স্থবির হয়ে যায়। আর করোনার প্রভাব তো এখনো কমেনি। গত কয়েক মাস করোনা একটু কমেছে। কিন্তু তারপরও আমাদের কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে।’

ফজলুর রহমান খোকন আরো বলেন, ‘গত কয়েক মাসে করোনার প্রভাব একটু কমে আসার পর আমরা ঢাকার ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মহানগরের কমিটিগুলো গঠনের কাজ করছি। এই ইউনিটগুলো তো ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, এগুলো করেই আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাত দিব। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে যারা কর্মসূচি পালন করছে, এরা আমাদেরই সহযোদ্ধা, আমাদেরই ভাই। তাদের সঙ্গে কমিটির বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তারপরও তারা কেন এ কর্মসূচি পালন করেছে সেটি বোধগম্য নয়।’

আট মাস পর কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর যথা সময়ে কাউন্সিল হবে কি না জানতে চাইলে ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘আসলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু তারপরও কোনো কমিটি দুই বছর থাকে, কোনো কমিটি দুই বছরের কম, আবার কোনোটি দুই বছরের বেশি সময়ও থাকে। তবে আমরা আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানকে বলব কাউন্সিল আয়োজন করতে। বাকি সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।’