২০ বছর পর ইফতার কিনলেন আবিদা!
পবিত্র মাহে রমজান শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এবার রমজানের আবহ সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনাভাইরাসের কারণে গোটা পরিস্থিতিটাই পাল্টে গেছে। রাস্তার পাশে ইফতারের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকার কথা দতোকানিদের। কিন্তু এবার রাজধানী ঢাকার কোথাও নেই ক্রেতা-বিক্রেতার সেই হাঁকডাক।
ইফতার শুরুর আধা ঘণ্টা আগে থেকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মূল সড়কের ফুটপাতে বসেছিলেন জরিনা বেগম। তিনি সবজি টোকান। কারওয়ানবাজারের কোথাও ইফতার কিনতে না পেরে বসেছিলেন রাস্তায়। তাঁর আশা, যদি কেউ ইফতার দিয়ে যায় কিংবা ডেকে নিয়ে ইফতার করায়। কিন্তু তেমন কাউকেই তিনি আজ পাননি।
জরিনা বেগম বলছিলেন, ‘বাজারে একজন ইফতার বিক্রি করছিল কিন্তু আমি কিনতে পারিনি। আগেই পুলিশ বন্ধ করে দিছে। সারা দিন রোজা আছি। এখন পেট জ্বালা করছে। তাই রাস্তায় আইছিলাম। কিন্তু কেউ ইফতার দিল না। আর আগেরবার প্রথম দিনেই চারজন ইফতার দিছিল।'
আজান শুনে বেরিয়ে দেখা যায়, একই সড়কে বিএসইসি ভবনের পাশের ফুটপাতে বসে শুধু মুড়ি খেয়ে ইফতার করছিলেন আবিদা নামের এক বৃদ্ধা। হাঁপাচ্ছিলেন আর ইফতার করছিলেন তিনি। আবিদা বলছিলেন, ‘২০ বছর ধরে কোনো দিন ইফতার কিনিনি। সব সময়ই কারওয়ানবাজারে ইফতার করেছি। কেউ না কেউ ইফতার দিয়েছে, সব সময়। কিন্তু আজ কেউ ইফতার দেয়নি। কিছুই পাইনি। এক হোটেল থেকে একটু মুড়ি আর ছোলা কিনছি। তাই খাচ্ছি। খুব খিদা লাগছে আজ।'
বিএসইসি ভবনের পাশে ফুটপাতেই ইফতার করছিলেন বিল্লাল হোসেন। তিনি বললেন, ‘সাড়ে ৫টার দিকে এক স্যার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আমাকে ইফতার দিয়েছে। ওই সময় এখানে যারা ছিল সবাইকেই দিয়েছে। এই একজনকেই আজ ইফতার দিতে দেখলাম।'
এগুলো তো গেল রাস্তার দৃশ্য। আজ কোথাও ইফতার পাওয়া যায়নি। পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে থাকেন শহিদ হোসেন নামের এক চাকরিজীবী। গ্রামে যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে ঢাকায় আছেন। আজ সন্ধ্যার আগে বের হয়েছিলেন কোথাও ইফতার পাওয়া যায় কি না সেই খোঁজে।
শহিদ হোসেন বলছিলেন, ‘কোথাও ইফতার পাইনি খুঁজে। আবার বাসায়ও তৈরি করিনি। ইচ্ছে করেনি কিছু বানাতে। মা আজ বিকেলে ফোন দিয়ে কেঁদেছিলেন তারপর থেকে মনটা বড্ড খারাপ। শেষে যখন ইফতার পেলামই না তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আর ইফতারই করব না। গ্রামে মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে এখন।'
মোটামুটি এবারের ইফতারের দৃশ্য এ রকমই। অথচ গত রমজানেও শহরজুড়েই ছিল জমজমাট ইফতারের আয়োজন। দুপুরের পর থেকেই ইফতারকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছিল রাজধানী। মাথায় টুপি লাগিয়ে ইফতার বিক্রেতারা খাবারের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতেন। ফুটপাত, পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার গলিপথেও ইফতারির ছোট-বড় দোকান ছিল। সেসব দৃশ্য আজ কোথাও দেখা যায়নি।
রাজধানীর বেইলী রোড, চকবাজার কিংবা হাতিরপুল এলাকার নবাবি ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, নবাবি স্পেশাল ফিরনি, নবাবি ক্ষীরসা, ফালুদা, নবাবি টানা পরোটা, কাশ্মিরি নবাবি পরোটা, চিকেন রেশমি কাবাব কোথাও মিলেনি এবার। করোনাভাইরাসে স্তব্ধতা নেমে এসেছে দেশজুড়ে। এবার নতুন এক ইফতারের পরিবেশ দেখেছে মানুষ।