২ কিশোর ও গেটম্যানের বুদ্ধিমত্তায় রক্ষা পেলেন কয়েকশ ট্রেনযাত্রী
কুমিল্লা রেলস্টেশনের অদূরে মুড়াপাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় রেলপথের ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার বালুভর্তি একটি ট্রাক হঠাৎ উল্টে যায়। তবে সে সময় গেটম্যানের সহযোগিতায় এবং স্থানীয় দুই কিশোরের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের কয়েকশ যাত্রী। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
কিশোর সুমন ও সুজন জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে কুমিল্লার আদর্শ উপজেলার ২ নম্বর উত্তর দুর্গাপুর মুড়াপাড়া রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রেলের ডাবল লাইনের কাজে ব্যবহৃত বালুবাহী একটি ড্রাম ট্রাক রেলপথের ওপর উল্টে যায়।
এ সময় সিএনজি অটোরিকশার চালক সুমন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সুজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে ক্রসিংয়ের গেটম্যান মো. টিপুকে জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে গেটম্যান টিপু কুমিল্লা রেলস্টেশনে খবর নিয়ে জানতে পারেন যে এরই মধ্যে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রসুলপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে এসেছে।
এ সময় সুমন ও সুজনকে সঙ্গে নিয়ে গেটম্যান টিপু অটোরিকশায় করে আধা কিলোমিটার উত্তরে গোমতী ব্রিজ এলাকায় গিয়ে লাল পতাকা উড়িয়ে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি থামানোর সংকেত দেন। সংকেত পেয়ে ট্রেনটি ইমার্জেন্সি ব্রেক চেপে দুর্ঘটনার ক্রসিংয়ের ১০০ গজ দূরে এসে থেমে যায়। এ সময় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়ার পর চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
মুড়াপাড়া লেভেল ক্রসিং গেটম্যান মো. টিপু বলেন, ‘রেলওয়ের ডাবল লাইন প্রজেক্টের একটি বালুভর্তি ট্রাক সন্ধ্যায় লেভেল ক্রসিং গেটের ওপর বিকল হয়ে পড়ে। সে সময় রসুলপুর থেকে কুমিল্লা ছেড়ে আসছিল চট্টলা এক্সপ্রেস। আমি স্থানীয় দুই কিশোরের সহযোগিতায় দৌড়ে গিয়ে লাল পতাকা দিয়ে থামানোর সংকেত দিলে ইমার্জেন্সি ব্রেক করে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় চট্টলা এক্সপ্রেস ও কয়েকশ যাত্রী।’
কুমিল্লা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রাফাতুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম অভিমুখী চট্টলা এক্সপ্রেস একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থকে রক্ষা পায়। এদিকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে আটকা পড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী মহানগর গোধূলি এবং রসুলপুর পুরাতন রেলস্টেশনে আটকে পড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী সুবর্ণ এক্সপ্রেস। এর পর রেলের উদ্ধারকর্মী ও কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাক থেকে বালু ফেলে লাইন থেকে ট্রাকটি উদ্ধার করেন। এতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার রেল যোগাযোগ প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মেছবাহ উদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজের তদারকি করেছি। এ ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি।’
এদিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। ট্রাকটি উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।’