৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা
করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সতর্কতামূলকভাবে আগামীকাল ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে দুপুর ১টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ব্রিফিং করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। অভিভাবকরা যেন নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা যার যার বাসায় থাকবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে, তা যেন তাঁরা নিশ্চিত করেন। সবাইকে এটি খেয়াল রাখতে হবে।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।’
আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সেই সময়ে পরীক্ষা শুরু হবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সেই তারিখের কাছাকাছি গেলে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। একদম গোড়া থেকে প্রেডিক্ট করা যায় না। একেক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ১ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত এখনই নয়। আরো কাছাকাছি গেলে তারপর সিদ্ধান্ত নেব। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হব না। আবার আগ বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেব না। অবশ্যই কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। স্কুলই অ্যালাউ করছি না। স্কুলে থাকছি না মানে বাসায় থাকছি। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে।’
‘কম বয়সী, বিশেষ করে ৩০ বছরের নিচে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কম। এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় রোড অ্যাক্সিডেন্টে। যেভাবে ছড়াচ্ছে সেই সংক্রমণ আমরা চাই না। আমরা অবস্থা দেখব। সামনে রোজা, গ্রীষ্মকালীনসহ অন্য ছুটি আছে। সেই ছুটিও যোগ হতে পারে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবে সংক্রমণের শিকার না হয় বা তাদের কারণে যেন অন্যরা সংক্রমিত না হয়।’
এর আগে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে আমরা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে, ১৮ থেকে ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। করোনাভাইরাস যাতে না ছড়াতে পারে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে। সব ধরনের সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পক্ষ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার দাবিতে গতকাল রোববার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কম যাচ্ছেন এবং অনেকেই হোস্টেল ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
রোববার বিকেলে সাময়িকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর মোর্চা সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
২৮ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ঢাবি
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মহামারি থেকে রক্ষা পেতে আগামী ১৮ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসসংলগ্ন আবদুল মতিন ভার্চুয়াল কক্ষে এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের চেয়ারপারসন, হল প্রভোস্ট, ইনস্টিটিউশনের পরিচালকদের নিয়ে এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জরুরি সভার বিষয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। এদিকে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাকসুর পক্ষ থেকেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের যে কথা, সেটা আমাদেরও কথা। মনের দিক থেকে সব কথা কাছাকাছি। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা বসে নেই। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে।’