৩ বছরেও শেষ হয়নি দুর্গাপুর-কলমাকান্দা সড়কের সংস্কার কাজ
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে তিন বছরেও শেষ হয়নি নেত্রকোনার দুর্গাপুর-কলমাকান্দার ২৪ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের মে মাসে সড়কটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারণে শেষ হয়নি সংস্কার কাজ। ফলে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুর-কলমাকান্দার যোগাযোগের একমাত্র ২৪ কিলোমিটার এই সড়ক পথে দুই উপজেলার হাজারো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে আসছে। শুধু কলমাকান্দাই নয় সুনামগঞ্জের মধ্যনগর, ধরমপাশা, জামালগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করছে প্রতিনিয়ত।
অপরদিকে কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কটির কাজ চলমান থাকায় এ অঞ্চলের রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কৃষিপণ্য পরিবহন, যাত্রীবাহী যানবাহন এবং অটোরিকশা চালকদের একমাত্র ভরসা দুর্গাপুর-কলমাকান্দা সড়কটি। কিন্তু এই সড়কে সংস্কারের নামে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় থামছেই না জনভোগান্তি। গেল তিন বছরে এই সড়কটিতে বেড়েছে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ২৪ দশমিক ২০৪ কিলোমিটার দুর্গাপুর-কলমাকান্দা সড়কের তিনটি প্যাকেজে মোট ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৯ টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে কাজের টেন্ডার হয়। ওই বছরের ৫ জুলাই ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৩ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৫ আগস্ট কাজ শুরু করে। হিসাব মতে ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু বন্যা, অতিবৃষ্টি, করোনাভাইরাসসহ নানা অজুহাতে পেরিয়ে যাচ্ছে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। কাজ শেষ করার অতিরিক্ত ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজের অগ্রগতি ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ।
এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই প্রথম প্যাকেজের (৯৮৪০ মিটার) সড়কে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ২৩ হাজার ২৬০ টাকার মধ্যে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় প্যাকেজেও (৭০০০ মিটার) সড়কে ৭ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৯৯৯ টাকার মধ্যে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ২২ হাজার ৬০৪ টাকা উত্তোলন করা হয়। বাকি তৃতীয় প্যাকেজেও (৭৩৬৪ মিটার) সড়কে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ২২ হাজার ৬০৪ টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তির মোট ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৮ হাজার ৮৬৫ টাকার মধ্যে ১৫ কোটি ১৯ লাখ ২ হাজার ৬০৪ টাকা উত্তোলন করা হলেও সড়ক যেনো আগের মতোই রয়ে গেছে।
২৪ কিলোমিটার এই সড়কের দুর্গাপুর অংশের চার কিলোমিটার ও কলমাকান্দা অংশের ছয় কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। আর বাকি ১৪ কিলোমিটার এখনো খানাখন্দ। সড়কটির দুর্গাপুর প্রেসক্লাব মোড়, বুরুঙ্গা, ভাঙ্গাব্রিজ, মাকরাইল, সাতাশি, মধুয়াকোনা, নাজিরপুর অংশে সড়কে যানবাহন চলাচলের বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
প্রতিদিন এই অংশগুলোর বড় বড় খান্দাখন্দে যানবাহন বিকল হয়ে আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ বিষয়ে ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা এলাকায় অতিবৃষ্টি ও করোনার অজুহাত দেখিয়ে কাজটি বন্ধ রাখার পর আবারো কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কথা স্বীকার করে বলেন, কাজটি দ্রুত শেষ করতে ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।