৪২ হাজার অভুক্তের পাশে হোমমেড ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘রাঁধো’
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন হয়ে যাওয়া ৪২ হাজার অভুক্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে হোমমেড ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ‘রাঁধো’। ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর এক মাসের মাথায় দেশে মহামারি কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে কর্মী ও গৃহিণীদের নিয়ে অভুক্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজে নেমে পড়ে কোম্পানিটি।
ঘরে রান্না করা খাবার মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে পৌঁছে দেয় ‘রাঁধো’। প্রথমে ঢাকার রাঁধুনিদের দিয়ে খাবার রান্না করিয়ে নিয়ে তা ঢাকার কর্মহীন অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ শুরু হয়। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, আদা, তেল, রসুন, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৯ জন বাবুর্চি ও সহকারীকে নিয়ে শুরু হয় রান্না। ডিম-খিচুড়ি বা সাদা ভাত এবং আলু আর ডিমের তরকারি। প্রতিদিন এমন সাড়ে চার হাজার প্যাকেট খাবার রান্না আর নিয়ম মেনে দূরত্ব রেখে বিতরণ করা হয়।
‘ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) আমাদের রান্না করা খাবার লকডাউন এলাকার দরিদ্র মানুষ, রাস্তার পথচারীসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অভুক্তদের মাঝে বিলিয়েছে,’ বলেন ‘রাঁধো’র সিইও সজল ইসলাম। তিনি বলেন, “করোনায় স্থবির হয়ে অনেকে কর্মহীন হয়ে ক্ষুধার কষ্ট করছেন। ‘রাঁধো’র কর্মী ও রাঁধুনিদের বিবেককে নাড়া দেয়। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ খাবার বিতরণ প্রকল্প শুরু করি।” সজল বলেন, “খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে সামাজিক সংগঠন বিদ্যানন্দ আমাদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এ কাজে পাশে থাকার জন্য ‘রাঁধো’র প্রত্যেক রাঁধুনিকেও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।”
রান্না করা খাবার বিতরণের কাজটি আপাতত বন্ধ রাখতে হয়েছে জানিয়ে সজল বলেন, ‘আমরা এখন শুকনো খাবার বিতরণ করছি আর ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছি। আসলে মহামারি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। সবাই যদি ঠিকমতো সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা দ্রুতই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব।’
‘রাঁধো’র এই কর্মযজ্ঞে টানা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যুক্ত ছিলেন ডা. মাকিন উল্লাহ। মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মাকিন বলেন, “যে করোনাভাইরাসের কারণে দরিদ্রদের জীবনে কষ্ট নেমে এসেছে, তা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। হাত ধোয়াসহ সব রকম সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ‘রাঁধো’র কর্মীরা খাবার রান্না করা থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করেছেন। এটা ভালো লেগেছে, এ জন্যই তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি।”
‘রাঁধো’ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম রাঁধুনি যারিন শাইমা বলেন, মাত্র শুরু করা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে এতটা কমিটমেন্ট দেখাতে পারে, আশা করা যায় না। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগ নেওয়ায় সব রাঁধুনির পক্ষ থেকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করে ঢাকায় এসে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন ‘রাঁধো’র প্রতিষ্ঠাতা সজল ইসলাম।