৫০ বছর পর ‘বীরবিক্রম’ স্বীকৃতি পাওয়া আবদুল খালেক আর নেই
গেজেট বিভ্রাটের কারণে ৫০ বছর পর ‘বীরবিক্রম’ খেতাবপ্রাপ্ত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক আর নেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গেজেট বিভ্রাটের কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ‘বীরবিক্রম’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন আবদুল খালেক। গত ৬ জুন নতুন প্রকাশিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তাঁর নাম ওঠে।
আবদুল খালেকের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল গ্রামে।
করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৭ জুলাই আবদুল খালেক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়নি।
আবদুল খালেকের বড় ছেলে মাসুম আক্তার জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবার জ্বর ও কাশির সমস্যা ছিল। গত রোববার রাতে মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তাই পরের দিন সকাল ১০টার দিকে তাঁকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাতে মারা যান।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে বীরবিক্রম আবদুল খালেকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গেজেট বিভ্রাটের কারণে এত দিন আব্দুল খালেক স্বীকৃতি পাননি। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত গেজেটে এক ধরনের ভুল ছিল। ২০০৪ সালের গেজেটে আরেক ধরনের ভুল হয়। প্রথমবার তাঁর পদবী লেখা হলো ‘এক্স নেভি’। পরের বার সেনাবাহিনী। তাঁর অফিশিয়াল নম্বরের শেষে ১৯-এর জায়গায় ভুলবশত লেখা হয়েছিল ৯১, যা ছিল পাঞ্জাবি সৈন্যের।
এ বিষয়ে মাসুম আক্তার জামান আরো বলেন, ‘২০১১ সালে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঠিকানাবিহীন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমার বাবার নাম, নৌবাহিনীর পদবী ও সার্ভিস নম্বর দেওয়া ছিল। তার ভিত্তিতে আমরা গেজেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করি। সে আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে যায়। এভাবে অনেক ভোগান্তির পর গত বছর নতুন করে আবার আবেদন করা হয়। এরপর আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেকের বীর বিক্রম স্বীকৃতি মেলে।’
এত দিন পর এই বীর বিক্রম স্বীকৃতিতে খুশি হতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক। খেতাব পাওয়ার পর গত ২৫ জুন তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একাত্তরের দোসররা আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমি গ্রামছাড়া হই। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আমি ফেরারি ছিলাম। এত দিন কেন আমার স্বীকৃতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি? কোথায়, কীভাবে ছিলাম কেউ কেন আমার খোঁজ নেয়নি?’
মুক্তিযুদ্ধকালে গোদাগাড়ীর খেতুর গ্রামে সিরাজুল চেয়ারম্যানের বাড়িতে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি। একাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর সেখানে গ্রেনেড হামলা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন সৈনিক আবদুল খালেক। কিন্তু গ্রেনেড ছোড়ার আগেই আহত হন তিনি। শত্রুবাহিনীর একটা গুলি তাঁর বুক ভেদ করে চলে যায়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ৭ নম্বর সেক্টরের আরো বেশকিছু সম্মুখসমরে অংশ নেন আবদুল খালেক।