মুজাহিদের চূড়ান্ত রায় ১৬ জুন

Looks like you've blocked notifications!
জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। ফাইল ছবি
 

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে।  আগামী ১৬ জুন এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে। 

আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চর অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। urgentPhoto

মুজাহিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান।  তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। 

শুনানি শেষে মুজাহিদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘১৭৫ জন যুদ্ধপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। মুজাহিদ অল-বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি প্রসিকিউশন।  যে দুটি অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি বকচর গণহত্যার ঘটনা (৭ নং অভিযোগ)। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, তখন ৭ নম্বর অভিযোগটি ছিলই না। এটি আইনবহির্ভূত। ’

অপর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘শুনানিতে আমরা সফল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। সব বিষয়ে সাধ্যমতো যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পাঁচটি বিষয়ে ট্রাইবুন্যাল যে সাজা দেওয়া হয়েছিল সব বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। শুনানিকালে প্রসিকিউশন ব্যর্থ হয়েছে। মুজাহিদ ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী আলবদর বা আল শামসের সদস্য ছিলেন না। তদন্ত কর্মকর্তাও এ কথা স্বীকার করেছেন। আমি আশা করি, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ খালাস পাবেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে আলবদর বাহিনীর ভূমিকাই ছিল বেশি। তৎকালীন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা ও নিবন্ধে এই বিষয়ে লেখালেখি প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। একাত্তরে আলবদল নামক একটি বই প্রকাশিত হতো। ওই বইয়ে দেখা যায় একটি বিদায়ী ভাষণে মুজাহিদের নাম রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে আলবদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে। এ ছাড়া একাত্তরে গণহত্যার সময় নিহতদের একজনের ছেলে তা সরাসরি দেখেছে। সে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেছে, লাইনে সবাইকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। এ দৃশ্য সে গাছের ওপর বসে দেখেছে। মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা সব নথিপত্র আদালতে উপস্থাপন করেছি। আশা করি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগও বহাল রাখবে।’ 

মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন তিনি। মুজাহিদের দাবি, ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই। 

মুজাহিদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার হন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় ২০১১ সালের ২১ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন কর্মকর্তারা। এরপর ২ আগস্ট তাঁকে ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।