সুদৃশ্য লিচু, অদৃশ্য শঙ্কা
লিচু দ্রুত পাকানো, আকারে বড় করা ও দীর্ঘ সময় পচনের হাত থেকে রক্ষায় দিনাজপুরের অনেক লিচু বাগানে কার্বেলাক (কার্বেনডাজিম) কেমিক্যাল স্প্রে করা হচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তর অনুমোদিত এই কেমিক্যাল (রাসায়নিক দ্রব্য) ব্যবহারের পর ১৫ থেকে ২০ দিন লিচু তুলে বিক্রি করতে না বলা হলেও এটি মানা হচ্ছে না। কেমিক্যাল ব্যবহারের এক-দুদিন পরই লিচু পেড়ে বাজারজাত করা হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে কেমিক্যালে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবদেহে। এসব লিচু খেলে যকৃৎ ও কিডনির জটিল রোগসহ ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
urgentPhoto
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরের বিভিন্ন বাগানে নানা ধরনের কার্বেলাক কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় বাগান-মালিকরা জানান, বেশি লাভের আশায় তাঁরা বাগানে কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন। লিচুতে কেমিক্যাল ব্যবহারের এক-দুদিন পরই তা পেড়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে কেমিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরে।
কেমিক্যাল বিক্রেতারাও স্বীকার করেন এর ক্ষতিকর দিকের কথা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনুমোদিত দিনাজপুরের কাউগাঁ মোড় এলাকার খুচরা বালাইনাশক বিক্রেতা মো. শাহীন আলম বলেন, কার্বেলাক ব্যবহারের পর কয়েক দিন এর মেয়াদ থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, লিচুতে কেউ আজকে কেমিক্যাল দিয়ে কালই পেড়ে বাজারে বিক্রি করে। এগুলো খেলে মানুষের মধ্যে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। মারা না গেলেও সাইড ইফেক্ট (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) হতে পারে। শিশুর শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, কেমিক্যাল থাকা এসব লিচু খেলে লিভার ও কিডনির জটিল রোগসহ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, বিষাক্ত কেমিক্যালের লিচু খেলে ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে। এ ছাড়া কেমিক্যালের বিষাক্ততায় লিভার ও কিডনির জটিল রোগসহ ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।
কৃষকদের কেমিক্যাল ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। দিনাজপুর কৃষি কর্মকর্তা মমতাজ সুলতানা বলেন, কৃষক ও বাগান-মালিকদের বিভিন্নভাবে সচেতন করা হচ্ছে, তাঁরা যেন কেমিক্যাল ব্যবহারের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে লিচু পেড়ে বাজারজাত না করেন।
অনেক কৃষিবিদ বলেন, শুধু সচেতন করলেই হবে না। লিচুতে কেমিক্যালের ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।