আ. লীগ প্রার্থী ও এমপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক আজ মঙ্গলবার তাঁর বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক জানান, তাঁকে পরাজিত করতে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়ারম্যান পদে তাঁকে মনোনয়ন দেন। কিন্তু নূরুল ইসলাম সুজন তা অমান্য করে একই পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা সারওয়ার হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। সারওয়ারকে বিজয়ী করতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন এবং নিজেই মাঠে থেকে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এমপি সুজন তাঁর প্রার্থীকে ভোট দিলে সোলার প্যানেল, টিআর, কাবিখা বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ হাসিনার প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি প্রমাণ করেছেন আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী নন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার জন্য সুজন দলের নেতাকর্মীদের সবাইকে নীরব থাকার পরামর্শ দেন এবং যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনার প্রার্থীকে পরাজিত করতে হবে বলে নির্দেশ দেন।
অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক আরো বলেন, ‘আমি অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। এই নির্বাচনে আমি পরাজিত হইনি, জননেত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট কমিটির সভাপতি এমপি সুজনের অনুসারী। তিনি প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও একই ভূমিকা পালন করেন বলে ছিদ্দিক অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর ছিদ্দিক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সংসদ সদস্য সুজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাসহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্রাট যা বললেন
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘জেলা পরিষদের নির্বাচনে আমি অ্যাডভোকেট ছিদ্দিকের প্রস্তাবক ছিলাম। তাঁকে দলের একক প্রার্থী হিসেবে আমি অন্য প্রার্থীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কিছু গ্যাপ থাকার কারণে মাঠের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে আমাদের চেষ্টা সফল হয়নি।’
এমপি সুজনের পাল্টা অভিযোগ
যোগাযোগ করা হলে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন জানান, যেহেতু বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি যেহেতু দলীয় একটি ইন্টারনাল পলিসি ছিল যে যেসব এলাকায় একাধিক প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী থাকে তাহলে ওই প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় ভূমিকা নিয়ে এবং একটি ভালো লোককে বের করার জন্য সহায়তা করবে দল। দল যদি ভালো লোককে দেয় তাহলে কোনো কথাই নেই। আর যদি অন্য কোনো লোক ভালো থাকে তাহলে তাকে বের করে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা থাকবে। আমি নিজেও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট মির্জা সারওয়ার হোসেনের পক্ষে ছিলাম। এ নির্বাচনে তো কোনো প্রতীক নিয়ে সরাসরি কাউকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক প্রসঙ্গে এমপি সুজন বলেন, তিনি গত পাঁচ বছরে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দলের কী কী উন্নয়ন করেছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তা ছাড়া তিনি জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে অযোগ্য হওয়ার কারণে তাঁকে টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইতে হয়েছে। পরাজিত হওয়ার পর তিনি এখন নিজের অপকর্ম ঢাকতে এই ধরনের সংবাদ সম্মেলন করছে। তিনি ভোটারদের টাকা দিয়েছেন। হেরে গিয়ে এখন টাকা ফেরত চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি কেন টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রচলন সৃষ্টি করলেন? এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন? এতদিন দলীয় একজন কর্মীকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারেননি আর নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভোট কিনতে পেরেছেন।’
নুরুল ইসলাম সুজন অভিযোগ করেন, ‘অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক একজন দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য। আমি দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য লোকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো. আমানুল্লাহ বাচ্চু। তিনি একই সঙ্গে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জেলা পাথর-বালি যৌথ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পাথরবালি ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী সমিতির সভাপতি।
আমানুল্লাহ বাচ্চু টেবিল ফ্যান প্রতীক নিয়ে পান ১৩৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি চশমা প্রতীক নিয়ে পান ১২২ ভোট। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা সারওয়ার হোসেন তালগাছ প্রতীক নিয়ে পান ১১৯ ভোট। নির্বাচনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক এমরান আল আমিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পান ১০১ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলদার রহমান আনারস প্রতীক নিয়ে পান ৯৪ ভোট। জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পান ৬ ভোট। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পল্লব কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে মাত্র ২ ভোট পান। একই সংখ্যক ভোট পান জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) বোদা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক এ এইচ এম ফজলুল হক।