সাতক্ষীরায় আ.লীগ নেতার তাণ্ডব

Looks like you've blocked notifications!

আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর সহযোগীদের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা শহরের জি এন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনী সভা পণ্ড হয়ে গেছে। রোববার তাঁদের হামলায় বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে একজনের দোকান ও একটি মোটরসাইকেল। 

সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম জানান, হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর তাঁর পকেট থেকে ৩৫ হাজার টাকাও লুটে নেয় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদের সহযোগীরা।

জি এন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে দাখিল করা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় করার দিন ছিল আজ রোববার। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা খাতুন জানান, নির্বাচনে চারটি পদে আবেদন পড়ে ১৭টি। এই আবেদন নিয়ে মিটিং শুরুর আগেই আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদ তাঁর বেশ কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েন। বিদ্যালয়ে ঢুকেই তিনি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর পর পরই শুরু হয়ে যায় স্কুলের মধ্যে তাণ্ডব। তাঁর সহযোগীরা বিদ্যালয়ের মধ্যে এদিক-ওদিক অবস্থান নেয়। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আবু সাঈদ তাঁর সহযোগী শেখ সেলিম ও তাইফুর রহমানসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার রুমে ঢুকেই হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন হবে না, আবেদনপত্রগুলো কোথায়?’। প্রধান শিক্ষিকা আবেদনকারীদের একটি তালিকা তাঁর হাতে দেওয়ার চেষ্টা করতেই তিনি তা ফেলে দিয়ে আবেদনপত্রগুলো দিতে বলেন। সেগুলো তাঁর হাতে তুলে দিতেই আবু সাঈদ তা পকেটে পুড়ে ফেলেন। আর মুখে বলেন, ‘কমিটিতে বিএনপি নেতা নান্টাকে (সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইনুল হক নান্টা) রাখা চলবে না, এডহক কমিটিই থাকবে, নতুন  কমিটি গঠিত হবে না।’ 

প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, এ কথা বলেই আবু সাঈদ  দরখাস্তগুলো নিয়ে চলে যান। এর আগে গেট তালাবদ্ধ থাকায় আমন্ত্রিত অতিথি পৌর কাউন্সিলর আইনুল হক নান্টা বিদ্যালয়ে ঢুকতে ব্যর্থ হন। এ সময় তাঁকে জানানো হয়, এখানে বিএনপির লোক আসতে পারবে না।
  
এদিকে স্কুল থেকে বেরিয়ে এসেই আবু সাঈদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় ‘সাঈদ ভাই এগিয়ে চলো,  নান্টা বাহিনী নিপাত যাক’ স্লোগান দিয়ে সাঈদের লোকজন পুরাতন সাতক্ষীরার বাজার পার হয়। তারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে নান্টার বৃদ্ধ বাবা রেজাউল হককে আহত করে। এ ছাড়া অসীম সাধু নামের এক যুবককেও মারধর করা হয়। দোকান কর্মচারী আবদুর রহিমকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। 

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে, মিছিলকারীরা রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির দোকান ভাঙচুর করে। 

এদিকে আবু সাঈদের এই তাণ্ডবের প্রতিবাদ করতে গেলে বিদ্যালয়ের সদস্য পদে আবেদনকারী সাবেক সভাপতি আজিজুল ইসলামকে মারধর করা হয়। এ সময় আরো লাঞ্ছিত হন আলতু, রিন্টু ও সিরাজুলসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। শ্রমিক লীগ নেতা তৌহিদুর রহমান ডাবলু ও ফিরোজ আহমেদ এসবের প্রতিবাদ করেন ।  

হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মিটিং হয়েছে এবং নতুন কমিটিও গঠিত হচ্ছে।’ তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন ‘কে বলে আপনাদের এসব কথা। আমি সেখানে অতিথি ছিলাম। কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছি। এর বেশি আর কোনো  তথ্য আমার কাছে নেই।’

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ জানান, প্রধান শিক্ষিকা এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন। সোমবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রধান শিক্ষিকা আরো জানান, বিদ্যালয় ছুটির মুহূর্তে আবু সাঈদ ১৭টির মধ্যে ছয়টি আবেদনপত্র তাঁর কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। তিনি জানান, পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর হওয়ায় যুবদল নেতা আইনুল হক নান্টার ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকার কথা। তিনি সদস্য পদে কোনো আবেদন করেননি।