বাউল খোদা বকশ শাহর স্মরণোৎসব শুরু

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুরে দেশবরেণ্য বাউলসাধক একুশে পদকপ্রাপ্ত খোদা বকশ শাহের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুদিনব্যাপী স্মরণোৎসব শুরু হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও বাউলগানের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। খোদা বকশ শাহর একমাত্র ছেলে বাউল আবদুল লতিফ শাহ ও পুত্রবধূ রেখা শাহ অতিথিদের স্বাগত জানান।
কর্মসূচিতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার গোলাম মোস্তফা খান, শহীদ খান, সদর উপজেলা ইউনিট কমান্ডার আশু বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী, আবদুল খালেক, আতিয়ার রহমান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বাউলসংগীত পরিবেশন করেন বাউল গঞ্জের শাহ, আবদুল লতিফ শাহ, রেখা শাহ, মিলন শাহ, বজলু শাহ, ফজলু শাহ প্রমুখ।
এদিকে দুদিনের এই উৎসবকে ঘিরে খোদা বকশ শাহের সমাধি চত্বরে দেশ-বিদেশ থেকে আসা বাউলদের সমাগম ঘটেছে, বসেছে গ্রামীণ মেলা। আগামীকাল রোববার রাতে এই উৎসব শেষ হবে।
আলমডাঙ্গার জাহাপুরে মরমি কবি খোদা বকশ শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঘোলদাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সংগীতে আকৃষ্ট হন। যাত্রাদলে যোগ দেন। তাঁর ছিল সুরেলা কণ্ঠ। যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি যাত্রাদলে ছিলেন।
১৭ বছর বয়সে খোদা বকশ ভাবসংগীত শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হরিণাকুণ্ডুর শুকচাঁদ শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি যান অমূল্য শাহর আখড়ায়। সেখানে তিনি ভাবসংগীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।
১৯৭৬ সালে খোদা বকশ ফকিরী পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে লালনসংগীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি খোদা বকশ শাহকে বাংলা একাডেমি ‘ফেলো’ পদ প্রদান করে।
১৯৮৬ সালে খোদা বকশ শাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে নিজের আখড়ায় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি (১ মাঘ) তিনি মারা যান।
খোদাবকশ শাহ স্ত্রী রাহেলা খাতুন, ছেলে আবদুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। নিজস্ব আখড়াবাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদা বকশ শাহকে বাংলা একাডেমি মরণোত্তর একুশে পদক দেয়।
খোদা বকশ শাহ ৯৫০টি গান রচনা করেন। তাঁর মাজারটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং জন্ম-মৃত্যু দিবস দুটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তাঁর ভক্তরা।
খোদাবকশ শাহর ছেলে আবদুল লতিফ শাহ ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।