রানা প্লাজার ঘটনায় মামলা দুর্বল!

Looks like you've blocked notifications!
ফাইল ছবি

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। ৪২ জনকে আসামি করে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি বিজয় কৃষ্ণ কর। 

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা দেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায় দুর্বল মামলা ও চার্জশিট হয়েছে। ইমারত আইনে যে মামলাটি করেছে রাজউক, সেই মামলায় সাজা দুই বছরের কারাদণ্ড। আর পুলিশের দায়ের করা মামলাটির ও সর্বোচ্চ শাস্তি কয়েক বছরের দণ্ড।

আইনজ্ঞদের মতে, রানা প্লাজা ধসে হাজার শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি হত্যাকাণ্ড। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ভবনধসের আগের দিন ফাটল দেখা দিয়েছিল। তারপরও ভবন ও পোশাক কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের জোর করে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন। তাঁরা শ্রমিকদের ডেকে এনে হত্যা করেছেন। ভবনে ফাটল ধরা পড়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেও এত বড় ঘটনা ঘটত না। তাই এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা ও ইমারত আইনের দায়ের করা মামলা দুটি ঘটনার তুলনায় অনেক দুর্বল। 

এ বিষয়ে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলনে, দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় চাঞ্চল্যকর মামলা। এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক দুর্বল দুটি মামলা করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হওয়া উচিত ছিল। 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এটি অবশ্যই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ ভবনে ফাটল ধরা পড়ার পরও শ্রমিকদের ডেকে মৃত্যুকূপে ঢুকিয়েছিলেন ভবন ও পোশাক কারখানার মালিকরা। তাই জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করা উচিত। 

তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঘটনাটি দুর্ঘটনাজনিত। তাই মামলাও হয়েছে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর। এটিকে বড় করে দেখার কিছুই নেই। এ আইনে যে সাজার বিধান রয়েছে, দোষীরা সে সাজাই পাবে। খুনের জন্য একটা পরিকল্পনা দরকার হয়, যা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ছিল না। তবে এ ঘটনায় অনেকের অবহেলা ছিল। এর জন্য দায়ীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। 

চার্জশিটে দুই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আবদুল খালেক, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, পৌরসভার সাবেক মেয়র রেফাত উল্লাহ, বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ আলী খানসহ ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে একই আসামি দুই মামলায় থাকায় মোট ৪২ জন ধরা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে দুই মামলায় মোট ৭৫০ জনকে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়লে মোট এক হাজার ১৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার মানুষ। ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আহত হন কয়েক হাজার। 

এ ঘটনা আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ভবনধসে প্রাণহানির ঘটনায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। পরে মামলাটিতে অপরাধজনক প্রাণনাশেরও অভিযোগ আনা হয়। সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয় এ মামলায়।