সিটি নির্বাচনে বাধা- নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিকরা

Looks like you've blocked notifications!
ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করার সময় দুর্ভোগ-নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন সাংবাদিকরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সাংবাদিকরা তাঁদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

এর আগে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া ঘটনা অস্বীকার করেছিলেন।  

আজ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান, তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আবদুল ওদুদ, অন্য এক সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রেজাউল ইসলাম।

নয়জন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের দিনের ঘটনার লিখিত বর্ণনা দেন।  

শুনানিতে সাংবাদিক অমিতোষ পাল বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে সাংবাদিকতা করি। সেই থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনের সংবাদ কভার করি। কিন্তু এবারের মতো কখনো পুলিশ বাধা দেয়নি। এবার শুধু পুলিশই নয় প্রিজাইডিং অফিসাররাও অসহযোগিতা করেছেন।’

অমিতোষ বলেন, ‘শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর সেখানে পুলিশ আমাকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করতে নিষেধ করে। বলে, এখানে থাকলে তাদের সমস্যা। পরে উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরি  (জিডি) করতে গেলে যন্ত্রণায় কাতরানোর পরও নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন সেখানে দায়িত্বে থাকা নারী পুলিশ কর্মকর্তা। আমি শারীরিকভাবে এতটাই অসুস্থ ছিলাম যে, যার ফলে জিডি না করেই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হই।’

সাংবাদিক সুজয় মহাজন বলেন, ‘মাহাবুব আলী ইনস্টিটিউট ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলে দেখি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় এক থেকে দুইশ লোক যে যেভাবে পারে ভোট দিচ্ছে এবং ভোটকক্ষে কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেই। তাঁদের একটি কক্ষে আটকে রেখে দুর্বৃত্তরা ব্যালটে সিল মারছিল। এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে একজন বলে ভাই ও ছবি তুলছে। এই বলেই তারা আমাকে মারতে শুরু করে। সেদিন সেখানে তারা যে যেভাবে পেরেছে সেভাবে মেরেছে। তিনি আরো বলেন, আনসার সদস্য, দুই তিনজন পুলিশের পক্ষেও কিছু করার  ছিল না। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ততক্ষণে তারা আমার মোবাইল, অফিসের পরিচিতি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনা মহাপুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) অবহিত করা হলে ভোটের পরের দিন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবাইলে থাকা মেমোরি কার্ড ছাড়া আমার মোবাইল ফোনসেটটি ফেরত দেন। ভোটের দিন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে তার পরের দিন আমি সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করি।

সাংবাদিক ওবায়েদ অংশুমান বলেন, ‘থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সামনেই হেনস্তা করা হলেও তাঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং ভোট কারচুপির যেসব ছবি তুলেছিলাম সেগুলো দুর্বৃত্তরা জোর করে মুছে দেয়।’ 

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা তদন্ত কমিটির কাছে ন্যায় বিচার পাওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ
করেন। 

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিচারিক ক্ষমতা নেই। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের শুনানিও করেছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আমরা সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে পাঠাব।’

মোহা. আনিছুর রহমান আরো বলেন, এক মাসের মধ্যে সাংবাদিক নাজেহালের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিশন। আমরা আরো ১৫ দিন সময় চাইব। এরমধ্যে প্রয়োজনে আবারও আপনাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারদের শুনানি করব। এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন কমিশনে পাঠাব। কমিশনই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

আনিছুর রহমান শুনানিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের যাঁদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে, যাঁরা আজ উপস্থিত হতে পারেননি তাদেরও শুনানি করা হবে। আপনারা তাঁদের আসতে বলেন। আগামী সাত দিনের মধ্যেই আরেকটি শুনানি হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি শুনানির ব্যবস্থা করা হবে।