আরাফাত সানিকে নিয়ে আদালতে যা হলো

Looks like you've blocked notifications!

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ২টায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজতখানায় এনে সানিকে রাখা হয়। তবে কোনো নতুন রিমান্ডের আবেদন না থাকায় তাঁকে আদালতের এজলাসে আনা হয়নি।

তবে আদালতে মামলার বাদী হাজির ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে আদালত উঠার সঙ্গে সঙ্গে মামলার বাদী তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে এসে দাঁড়ান। পরবর্তী সময়ে সানির পক্ষের আইনজীবী এ এস জুয়েল জামিন শুনানিতে বলেন, ‘যেহেতু সানিকে রিমান্ড থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাই আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটি সানির চিকিৎসার আবেদন এবং অন্যটি সানির জামিনের আবেদন। আমি জামিন শুনানির সময় প্রথমে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এ  মামলার এজাহারে দুটি ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।’

আইনজীবী জুয়েল বলেন, ‘একটি ঘটনা গত বছরের ১২ জুন ও আরেকটি ২৫ নভেম্বর এবং মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে ৫ জানুয়ারি ২০১৭। অর্থাৎ একটি লম্বা সময় পার হওয়ার পর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এজাহারকারী দাবি করেছেন আমার আসামির (সানি) সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আপনি এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় দেখেছেন কাজির যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তাঁর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এবং সঙ্গে আরো একটি প্রতিবেদন এসেছে। যে কাজি এ বিবাহ পড়িয়েছেন বলে দাবি করা হয় তিনি জানিয়েছেন উল্লেখ করা বালাম নম্বরের কোনো বই নাই। তার মানে এটি হচ্ছে অস্তিত্বহীন একটি ঠিকানা দিয়ে একটি ভুয়া কাবিননামা দিয়ে এ বিয়ে পড়ানো হয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে দেখেছি, বালাম নং ৫৬, পৃষ্টা ২৩-এ কোনো বই তাদের কাছে নেই এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার হলেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তাঁর কাছ থেকে কোনো ধরনের কাবিননামা হয়নি, তা সৃজিত হয়েছে। তাই আমি আবেদন করব এটি তদন্তে দেওয়া হোক, তদন্ত করে দেখা হোক এটি সঠিক কি না। এটা হলো আমার প্রথম বক্তব্য, আর দ্বিতীয় বক্তব্য হলো, আপনি খেয়াল করে দেখবেন প্রথম যে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ১২ জুন ২০১৬ নাসরিন সুলতানা নামের একটি ফেক আইডি আসামি নাকি ক্রিয়েট করেছেন এবং সে আইডি থেকে নাসরিন সুলতানাকে কিছু অশ্লীল ছবি পাঠানো হয়েছে, এটা হচ্ছে তাদের বক্তব্য এবং সানি যে আইডি থেকে ছবি পাঠিয়েছেন নাসরিন এ ছবিগুলো পাওয়ার পরে সাত আট মাসের মধ্যে কোনো আইনগত পদক্ষেপ ও অন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেননি। এরপর আবার পাঁচ মাস পর একই ঘটনা, উনার নিজের আইডি থেকে কিছু অশ্লীল ছবি চলে আসল তার পরও তিনি কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। এতেই মামলার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়। গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে মামলার বাদীর সঙ্গে নাকি সানির বিয়ে হয়। বিয়ের পরে নাকি তাঁকে (মামলার বাদী) ঘরে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেল তিনি চাইলে কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইনে দাম্পত্য পুন: উদ্ধারের মামলা করতে পারতেন, তিনি কোনো মামলাও করলেন না। আমাদের যে নিবেদন সেটা হচ্ছে শুধু আরাফাত সানির ক্যারিয়ার ধ্বংস ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার জন্য এ মামলা দায়ের করেছেন। তাই আমরা এ আদালতের কাছে আরাফাত সানির যেকোন শর্তে জামিন চাচ্ছি। আরাফাত সানি দেশের সম্পদ এবং তিনি হলেন বিশ্ব তারকা ক্রিকেটার। তার মতো এমন ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা তার জামিন চাচ্ছি।’

অপরদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী নাসরিন জাহান রুবি শুনানিতে বলেন, ‘আসামির সঙ্গে আমার বাদীর বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর একসঙ্গে থাইল্যান্ডও যান আসামির ভিসা ও বাদীর ভিসা একসঙ্গে আদালতে দাখিল করা হলো।

আইনজীবী নাসরিন আরো বলেন, ‘আমরা যে বাঙালি নারীরা আছি আমরা কিন্তু খুব স্বামীভক্ত হই। এমনকি সারা দিন স্বামীরা বাইরে গিয়ে মোরগ পোলাও খেয়ে ঘরে এসে যদি বলে,আমি না খেয়ে আছি তাও আমরা না খেয়ে স্বামীকে আগে খেতে দেই। আমরা স্যার স্বামীকে অনেক বিশ্বাস করি। আমাকে (বাদীর পক্ষে বলতে থাকেন আইনজীবী) যখন বিবাহ করা হয়েছে এবং বিয়ের পর যখন আমাকে সংসারে তুলে নেওয়া হয় না তখন যখন আমি তার কাছে কাকুতি মিনতি করি ,তখন সে আমাকে একটা কাবিননামা এনে দেয় এবং বলে তুমি আমার বিবাহিত স্ত্রী। তোমাকে আমি থাইল্যান্ডে বেড়াতে  নিয়ে যাব। আর এখানে কিছু স্যার ছবি দেওয়া হলো যেগুলো স্বীমা-স্ত্রী ছাড়া অন্যকারো ছবি হতে পারে না। এরপর স্যার রিমান্ড ফেরতের পর যে কাগজটা আসছে, সেখোনে লেখা আছে আসামির কাছ থেকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো যাচাই-বাচাই চলছে এবং মামলার তদন্তের স্বার্থে ব্যাপক সহায়ক হবে। মামলার তদন্ত অব্যাহত এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা আবশ্যক। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে। এ ঘটনার সম্পূর্ণ সত্যতা ছিল তাই মামলাটি গৃহীত হয়েছে এবং মামলাটির তদন্ত চলছে। সে কারণে আমি আসামির বিরুদ্ধে জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর বিনীত নিবেদন করছি। এ ছাড়া আসামি যে কাবিননামা দিয়েছেন তা যদি ভূয়া হয় তাহলে আমরা আসামির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করব। সানির মা স্বীকার করছে তিন বছর ধরে সে মেয়ে আমার বাসায় যায়। আমরা আসামির জামিনের বিরোধিতা করছি।’

আসামির আইনজীবী জুয়েল বলেন, ‘আসামির ২৮ তারিখ জাতীয় লিগের খেলা আছে। এ মামলায় দাখিল করা কাবিননামাটি তদন্ত করা হোক এবং সানির চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য আদেশ দেওয়া  হোক।’

শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু বলেন, ‘আমি আদেশ দিচ্ছি জামিন নাকচ করা হলো।’ তিনি আসামির আইনজীবীদের বলেন, ‘কেন জামিন নাকচ করছি তা ভালো করে জানেন। আর অন্য আবেদনগুলো আপনারা আমলি আদালতে আবেদন করবেন।’

এরপরই মামলার বাদীকে আদালতে খুব খুশি দেখা যায়। তিনি তিন বার বলেন, আলহামদুলিল্লাহ।

এর আগে জামিন শুনানির সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোল বাধে। তখন বিচারকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

গত রোববার সাভারের আমিনবাজার থেকে ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হলে একদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।