হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

চ্যানেল বন্ধ করে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যায় না

Looks like you've blocked notifications!

টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ রোববার ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজের রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এই মন্তব্য করেন।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি খারিজ করেন।

রায় খারিজের ফলে বাংলাদেশে তিনটি চ্যানেল প্রদর্শনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া।

বেলা সোয়া ১১টায় রায় পড়া শুরু করেন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি জে বি এম হাসান। পরে পৌনে ১টার দিকে রায় পড়া শেষ হয়। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী রায়ে একমত পোষণ করেন। এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের শুরুতে আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানিকালে বক্তব্যগুলো উপস্থাপন করেন। এর পর  রিটকারীর যুক্তি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় রিট খারিজ করে দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, বিশ্বায়নের যুগে টিভি চ্যানেল বন্ধ করে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়।  তবে এমন কোনো কিছু প্রদর্শন করা ঠিক হবে না, যা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের পরিপন্থী। সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

আদালত রায়ে বলেছেন, এসব সিরিয়াল প্রদর্শনের কারণে যদি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে,তাহলে দণ্ডবিধির ২৮ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার চাইতে পারেন। বাংলাদেশে এসব চ্যানেল, সিরিয়াল পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি রয়েছে। তারা এ দায়িত্ব নিতে পারে।

আদালত বলেন, আবেদনকারী তাঁর রিটে গ্রহণ করার মতো নতুন কোনো আইনি যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই রিট আবেদনটি খারিজ করা হলো।    

গত ২৫ জানুয়ারি রিটটিতে পঞ্চম দিনের মতো শুনানি শেষ হয়। আজ ২৯ জানুয়ারি এ রিটের রায় ঘোষণা করা হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন এখলাসউদ্দিন ভূঁইয়া। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভারতীয় এসব টিভি চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়ালের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যে আঘাত হানা হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীসহ প্রত্যেক পরিবারেই কলহ-বিবাদ চলছে। এরই মধ্যে এসব সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হয়ে ২০ জনের মতো নাগরিক আত্মহত্যা করেছে। অনেক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। বিষয়টি জনস্বার্থে চিন্তা করে রিট করা হয়।

রিটকারী আইনজীবী আরো বলেন, এ রায়ে তিনি সংক্ষুব্ধ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আশা করা যায়, আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।

২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে ভারতীয় এ তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ওই সময় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

রুলে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন। এতে ভারতীয় সব চ্যানেল বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়।