বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিবেদন

‘মানবসেতুতে’ হাঁটার ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ তিনজন অভিযুক্ত

Looks like you've blocked notifications!

চাঁদপুরের হাইমচরের নীলকমল ওসমানিয়া হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের পিঠের ওপর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের হেঁটে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, স্কুল কমিটির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দা সারওয়ার জাহান।

প্রতীকী সেতুতে শিশুদের পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটে প্রধান অতিথি ‘টোল বাবদ’ পাঁচ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেছেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে টাকাটা শিশুদের না দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কে আত্মসাৎ করেছেন সে তথ্য খুঁজে পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে তিনি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বাচ্চাদের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, মানে মানুষের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, আসলে বিষয়টি খুবই অমানবিক এবং নিষ্ঠুর একটা আচরণ। এটা খুব খারাপ দৃষ্টিতে সবাই দেখছে, আমিও দেখছি। উনি (উপজেলা চেয়ারম্যান) বাচ্চাদের পিঠের ওপর দিয়ে পা দিয়ে মানবসেতু যেটা তারা তৈরি করেছে, তার ওপর দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে অন্যদিকে আবার উনি জুতা পায়ে নেমেছেন।’

‘কোনো ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ এটা করবে বলে আমি মনে করি না। এটা ওনার একান্তই ব্যক্তিগত দায় বলে আমি মনে করি’, যোগ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ৩০ জানুয়ারি (সোমবার) চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা ‘পদ্মা সেতু’ সেজে প্রদর্শনী করে। আর ওই ‘পদ্মা সেতু’র ওপর দিয়ে হেঁটে যান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নূর হোসেন পাটোয়ারী। পরে তিনি ‘খুশি হয়ে’ শিক্ষার্থীদের পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারও দেন।

এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশেই সমালোচনা শুরু হয়। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। দুদিন পর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হুমায়ুন পাটোয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনসুর পাটোয়ারী ও একই কমিটির সদস্য এম এ বাশারকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

ঘটনার পরই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দ সারোয়ার জাহানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং এ ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ মোট ২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ঘটনাটি তদন্তকালে উপজেলা চেয়ারম্যান, স্কুল কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তদন্ত কর্মকর্তার সামনে না এসে লিখিত বক্তব্য পাঠান।

১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে হাইমচরের এই স্কুলটিতে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনার কথা উঠে আসে।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, তবে অন্যান্য বছর শিশুরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে কাঠের তক্তা দিয়ে সেতু তৈরি করতে। এবারই প্রথম অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জুতা পায়ে সরাসরি শিশুদের পিঠের ওপর দিয়ে হাঁটলেন।