সার্চ কমিটি ব্যর্থ হয়েছে : আকবর আলি খান
অতীতের মতো সম্প্রতি গঠিত সার্চ কমিটিও নির্বাচন কমিশনার সুপারিশের ক্ষেত্রে সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেছেন, ‘অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) আদৌ সচিব ছিলেন না। কোর্টের জাজমেন্ট অনুসারে তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সচিবের দায়িত্ব তিনি পালন করেননি।’
আজ শনিবার এফডিসিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ড. আকবর আলি খান এসব কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ সবুর।
নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে মন্তব্য করে ড. আকবর আলি খান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটিকে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন দলের কাছ থেকে প্রার্থীর নাম নিয়ে, সেখান থেকে তাঁদের পছন্দমতো নাম বাছাই করেছেন। কিন্তু এত সহজে নাম বাছাই করা যায় না। মাত্র ১০ দিনে লোকের তালিকা দেখে এটা করা সম্ভব নয়। সার্চ কমিটিকে আরো কিছু দিন সময় দেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।
ড. আকবর আলি খান বলেন, এর আগে বাংলাদেশে কোনো সার্চ কমিটি যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সফলতার পরিচয় দেয়নি। সম্প্রতি গঠিত সার্চ কমিটিও নির্বাচন কমিশনার সুপারিশের ক্ষেত্রে সফল হয়নি। যাদের অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্তার ইতিহাস রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই সে সব লোককে নির্বাচন কমিশনার বাছাই না করাই শ্রেয়। তাই নির্বাচনকালীন সরকার কি হবে, তা নিয়ে এখন ভাবা উচিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ড. আকবর আলি খান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে কি না, সে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো কেন নেবে? এ সিদ্ধান্ত জনগণের হাতে ছেড়ে দেন। গণভোট করেন। গণভোটে যদি জনগণ চায়, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে। না চাইলে দরকার নেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে বিরাজমান অসহিষ্ণুতা ও অশালীন বাকযুদ্ধ গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সহায়ক নয়। তিনি উল্লেখ করেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরো দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্ববধায়ক সরকার রাখা যেতে পারে মর্মে যে অভিমত দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।
সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত কিছু রাজনৈতিক দলের উপর ছেড়ে দিলে গণতন্ত্র টেকসই হয় না বলেও মন্তব্য করেন ড. আকবর আলি খান।
দেশে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সাইথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক ছাড়াও প্রথমে ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পরে আরো চারজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দলের কাছ থেকে পাঁচটি করে নাম জমা নেয় তারা। বাকি দলগুলোর চারটি সার্চ কমিটিতে নাম দেয়নি আর একটি দল নির্ধারিত সময়ের পর নাম জমা দেওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ১৩০টি নামের মধ্য থেকে ২০টি নাম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বৈঠকে বসে।
এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক সচিব খান মোহাম্মদ নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
এর আগে ২০১২ সালেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন।