বারান্দা-মাঠে ক্লাস করছে খুদে শিক্ষার্থীরা
ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও কুড়িগ্রামের ঘড়িয়ালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলছে ভবনের বারান্দা ও মাঠে। বিদ্যালয়টিতে কোনো সংস্কার কিংবা নতুন ভবনের ব্যবস্থা না হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। বিদ্যালয়ের এমন বেহাল অবস্থার কারণে কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মিত হয় ১৯১৪ সালে। ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টিতে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারে ব্যয় করা হয় ৭০ হাজার টাকা। এর পরও নির্মিত হয়নি কোনো নতুন ভবন।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কয়েকবার পরিদর্শন করে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেও কোনো উপায় না পেয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দা ও মাঠেই ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া পরিত্যক্ত রয়েছে বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষ। এতে করে স্কুলটির মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুোষ প্রকাশ করেছে অভিভাবক মহল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে, পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ছে।
নানা সংকটে জরাজীর্ণ স্কুলটিতে বর্তমানে পড়াশোনা করছে ২৩৯ ছাত্রছাত্রী। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কিছু ছাত্রছাত্রী একটি রুমে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে। আর কিছু ছাত্রছাত্রীকে পড়তে হয় বারান্দা অথবা খোলা মাঠে।
দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
শিক্ষার্থীরা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে বাইরে ক্লাস করায় তারা নানামুখী সমস্যায় পড়ছে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে বাড়ি চলে যায় তারা। এতে করে পড়াশোনা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
‘আমাদের ক্লাসরুম নাই। আমরা কষ্ট করে পড়ালেখা করছি। আমরা আমাদের ক্লাসরুম চাই,’ বলল বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সোহেল।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে কোনো বিদ্যালয় চলতে পারে না। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ না করলে আমি আর আমার বাচ্চাকে ওই স্কুলে পাঠাব না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জানান, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বারান্দায় বা মাঠে বসে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করছে। এতে তারা যেমন কষ্ট পাচ্ছে, তেমনি বিড়ম্বনায় আছেন শিক্ষকরাও।
রাজারহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকতারী পারভীন জানান, ঘড়িয়ালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ভবন নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শত বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ঠিক রাখতে সরকারকে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের অনুরোধ করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার জানান, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বারবার চিঠি পাঠনো হচ্ছে। কিন্তু বরাদ্দ না আসায় ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।