জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজনে নিজের জীবন দেব : প্রধানমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হলে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আগামী প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এমন কথা জানান। জনসভায় তিনি লক্ষ্মীপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন।

প্রায় ২০ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন। তাঁর সফর উপলক্ষে আয়োজিত জনসভাকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর পরিণত হয় মিছিলের শহরে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল গিয়ে মেশে জনসভাস্থল- লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামে।

বেলা ৩টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী যখন জনসভাস্থলে আসেন, তার অনেক আগেই পুরো স্টেডিয়াম ভরে যায় কানায় কানায়। হাজারো মানুষ তাদের নেত্রীকে স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানায়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলেন, একমাত্র তাঁর সরকারই জনগণের কল্যাণে কাজ করে। বিপরীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে শুধু নিজেদের আখের গোছানোতেই ব্যস্ত থাকে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তাঁর সরকারের সময়েই অপেক্ষাকৃত অবহেলিত জনপদ লক্ষ্মীপুরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। সরকার বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছে জানিয়ে তিনি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় আরো মনোযোগী হতে বলেন। ঘোষণা দেন দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারি কলেজ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের।

জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে অভিভাবকদের আরো তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। আর আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখার জন্য।

এর আগে জনসভাস্থলে পৌঁছে নয়তলাবিশিষ্ট জেলা আদালত ভবন, সদর ও কমলনগর উপজেলা কমপ্লেক্সসহ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বাংলাদেশের মানুষ যারা গৃহহারা, নদীভাঙা তারা ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেককে আমরা বিনামূল্যে বাসস্থান তৈরি করে দেব। একটি মানুষও যাতে কষ্ট না পায়, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আপনাদের দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই, আগামী প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে গিয়ে আমার বাবা তাঁর জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও আমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছি আপনাদের স্বার্থে, আপনাদের কল্যাণে, আপনাদের উন্নয়নে। যদি প্রয়োজন হয় বাবার মতো জীবন দিয়ে আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে দেব- এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।  লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নের জন্য আপনাদের দাবি-দাওয়া করতে হবে না, কিছু বলতে হবে না, বাংলাদেশকে আমি চিনি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমি এ দেশকে চিনি, আমি এ দেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল সবই আমার পরিচিত।’

মেঘনা নদীর ভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের (প্রথম পর্যায়) উদ্বোধন করেছি। খুব শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করব। আমরা নদীভাঙন থেকে লক্ষ্মীপুরকে রক্ষা করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশকে উন্নত করা কিন্তু বিএনপি কী করেছে এ দেশে। এ লক্ষ্মীপুরে যেভাবে তারা অত্যাচার করেছে, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেনি। বিএনপি আসা মানেই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। তারা ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের মানুষের জীবনের নাভিঃশ্বাস ওঠা। জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল, এ লক্ষ্মীপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে তারা হত্যা করেছিল। বিএনপি ধর্মে বিশ্বাস করে না। ২০১৫ সালে বায়তুল মোকাররমে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে। কৃষক লীগ নেতা আযম কোরআন শরিফ পড়ছিল, সেখানে তাঁকে খুন করা হয়েছে। যারা এভাবে মানুষ খুন করে, যারা কোরআন শরিফ পোড়ায়, যারা মসজিদে আগুন দেয়, তারা কিসের জনকল্যাণে কাজ করবে। ওই বিএনপির নেত্রী হুকুম দিয়ে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণ চাই। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় এবং জেলায় একটি করে মসজিদ এবং ইসলামিক কালচার সেন্টার তৈরি করে দেব। যেটায় ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা মানুষ পেতে পারে।’

জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, লক্ষ্মীপুরে লক্ষ্মী ফিরে এসেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মিছিল করার এখন আর ক্ষমতা নেই। বিএনপি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তাদের মরা গাঙে আর জোয়ার আসে না।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। পকেট কমিটি করবেন না। ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি করেন। প্রধানমন্ত্রী অন্যায় পছন্দ করেন না। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ জনগণকে খুশি করা ও জনগণের জন্য কাজ করা।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম শাহজাহান কামাল, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের এমপি  লায়ন এম এ আউয়াল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি ফরিদুন নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মমিন পাটোয়ারী।

এ সময় বক্তারা কমলনগর মেঘনা নদীর ভাঙনরোধে তীররক্ষায় আরো সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, কৃষি খামার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়ন, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নীতকরণ, নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম হাজারী, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না, নজরুল ইসলাম ভুলু।

২৭ প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পসহ (প্রথম পর্যায়) ১০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী অন্য যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে- মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পরিষদ ভবন (লক্ষ্মীপুর সদর), উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম (লক্ষ্মীপুর সদর), উপজেলা পরিষদ ভবন (কমলনগর), উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম (কমলনগর), লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় ও চতুর্থ) এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রাণী হাসপাতাল (কমলনগর)।

প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছে- ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও নাবিক নিবাস, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, মজু চৌধুরীর হাট, পুলিশ অফিসার্স মেস, লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্যগুদামে ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারপুর সেতু, চেউয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌবন্দর, লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপণিবিতান, আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর কমপ্লেক্স (রামগঞ্জ), পৌর আজিম শাহ (রহ.) হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন-কাম-পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (রায়পুর) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (কমলনগর)।