চারদিনেও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার
অপহরণের চারদিনেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার। এ নিয়ে পতাকা বৈঠকের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) কোনো সাড়া দেয়নি।
এদিকে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমে রাজ্জাকের হাতকড়া পরিহিত ছবি প্রকাশের পর লিখিতভাবে বিজিপির কাছে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে বিজিবি।
বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জার আল জাহিদ বলেন, ‘‘বিজিপির মুখপত্র ‘দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ দৈনিকে বিজিবি সদস্য রাজ্জাকের হাতকড়া পরা অবস্থায় ছবি ছাপানো উদ্দেশ্যমূলক। এটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত করেছে। এটি খুবই নিন্দনীয়। চিঠিতে এ বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ২ নম্বর সেক্টর প্রধানের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।”
বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ স্থলবন্দর রেস্ট হাউসে পতাকা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণ না দেখিয়ে বিজিপি তা বাতিল করে দেয়। এর পর থেকে বারবার আহ্বান করা হচ্ছে পতাকা বৈঠকের।’
আনিসুর রহমান জানান, শুক্রবার মিয়ানমারের ঢেকুবনিয়ায় ৩৭ বাংলাদেশি ফেরতের বিষয়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নায়েক আবদুর রাজ্জাকের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। বিজিপি পরবর্তী সময়ে অন্য একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিজিপিকে এ ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি। নায়েক আবদুর রাজ্জাকের নিরাপত্তার কথাও জানিয়েছি। চিন্তার কোনো কারণ নেই। খুব শিগগির একটা সমাধান হয়ে যাবে।’
গত বৃহস্পতিবার বিজিপির মুখপত্র দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার দৈনিকে প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজ্জাকের দুটি ছবি প্রকাশিত হয়। একটিতে দেখা যায়, তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে জেনারেটরের সঙ্গে শিকলবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাঁর মুখে ও নাকে রক্তের দাগ। অন্যটিতে দেখা যায়, তাঁর সামনে একটি বন্দুক, ২২টি গুলি, চারটি মোবাইল, একটি রামদা, একটি চাকু, দুটি টর্চলাইটসহ বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র রাখা হয়েছে। উভয় ছবিতেই তাঁকে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানান, গত বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দমদমিয়া বিওপি চৌকির ছয়জনের একটি টহল দল হ্নীলা ইউনিয়নের নাফ নদীর জইল্যার দ্বীপ এলাকায় দুটি মাছধরার ডিঙিনৌকায় করে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এ সময় বিজিপি তাদের সীমান্ত থেকে একটি ট্রলারে করে এসে বিজিবির ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে বিজিবির সিপাহি বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আর নায়েক আবদুর রাজ্জাক নাফ নদীতে পড়ে গেলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।’
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে।’