বটমূলে হামলা মামলা

প্রথম পর্যায়ে ১৪ বছর, দ্বিতীয় পর্যায়ে তিন বছর

Looks like you've blocked notifications!
পুরোনো ছবি

রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার বিচারের প্রথম পর্যায়ে শেষ হতে পার হয়েছে ১৪ বছর। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিচার প্রক্রিয়া হাইকোর্টে যাওয়ার পর পার হয়েছে প্রায় তিন বছর। বর্তমানে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হাইকোর্টে চলমান। কবে নাগাদ তা শেষ হবে, নেই কোনো হদিস। এমনকি বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, বিলম্বিত বিচারের কারণে ন্যায়বিচার-বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। একই রকম মন্তব্য করেছেন ফৌজদারি মামলা বিশেষজ্ঞ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রমনা বোমা হামলার ঘটনায় ১৪ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ আদালত মুফতি আবদুল হান্নানসহ আট জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হাইকোর্টে চলমান রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের রায় দেওয়ার আড়াই বছর পর এ মামলার শুনানি শুরু হয়। তবে এখনো শুনানি শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নববর্ষের সময় রমনা বটমূলে বোমা হামলার বিচার কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনো বলতে পারছি না। এ মামলার বিচারকাজ আদৌ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে হয়, অন্যথায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ মামলা এত বছর ধরে ঝুলে আছে যে, আদৌ কবে নাগাদ তা শেষ হবে এর কোনো ঠিক নেই।’

‘এ মামলার বিচার শেষ হবে কি না, তা নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানকে এরই মধ্যে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অন্য আসামিদের বিচার চলমান রয়েছে।’

এদিকে এ ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এ বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলা এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ওই মামলার চার আসামি এখনো পলাতক।

মামলাটির বিচারকাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার বিষয়ে ঢাকার মহানগর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, একটি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় বারবার সমন দেওয়া সত্ত্বেও সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছে না। এতে বিচার বিলম্ব হচ্ছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রাজধানীর রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে ১০ জন নিহত হন। আহত হন আরো অনেকে। ওই ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ আদালত মুফতি হান্নানসহ আট জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন হুজি নেতা মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আকবর হোসাইন ও আরিফ হাসান। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন পলাতক। এ ছাড়া এ মামলায় হুজির আরো ছয় জঙ্গিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য এই মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি মুফতি হান্নানসহ কারাবন্দি আসামিরা আপিল দায়ের করেন। আপিলে তাঁরা মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় বাতিল চান।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসব ডেথ রেফারেন্স ও আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় মামলার পেপার বুক করার নির্দেশ দেন। এরপর এই মামলার পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়।