হাকালুকি হাওরে মরেছে ২৫ টন মাছ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে
হাকালুকি হাওরের পানিতে তলিয়ে থাকা ধান পচে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। আধা কাঁচা ধান পচে গত কয়েকদিনে হাওরে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মাছ, গৃহপালিত হাঁস, শামুক, কাঁকড়াসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী মারা যায়। কিন্তু দুদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে আসায় ও মৎস্য বিভাগ হাওরের পানিতে চুন ও ওষুধ ছিটালে পানির স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।
শনিবার বিকেলে মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে মৌলভীবাজার শহরের শমসেরনগর রোডে মৎস্য অফিসে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ ক ম শফিক উজ-জামান জানান, ১৫ এপ্রিল থেকে হাকালুকি হাওরে মাছ মরে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে কুলাউড়া উপজেলায় সাত টন, জুড়ী উপজেলায় আট টন এবং বড়লেখা উপজেলায় ১০ টন মিলে মোট ২৫ টন মাছ মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরপর মৎস্য বিভাগ মাছ মরার কারণ অনুসন্ধানে জানতে পারে হাওরের ধান পচে পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষক্রিয়ার ফলে পানির অক্সিজেন ও পিএইচ কমে গিয়ে অ্যামোনিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ মরে যায়। হাওরের এ পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সমন্বিত দল স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হাকালুকি হাওর যান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান দিনভর এলাকার মৎস্যজীবী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে সমন্বিত দলের সদস্য হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রমজান আলী, মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ ক ম শফিক-উজ-জামান, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদসহ মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পরিদর্শন শেষে যুগ্ম সচিব জানান, সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং পানি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হাওরের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ ক ম শফিক উজ-জামান জানান, ১৭ এপ্রিল হাওরের পানির পিএইচ-৬, ডিও-৪.৯, পিপিএম এবং অ্যামোনিয়া ১ পিপিএম ছিল। পরে ক্রমান্বয়ে পিএইচ ও ডিও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অ্যামোনিয়া কমতে থাকে। ২০ এপ্রিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিএফআরআই টিমসহ অন্যান্যরা হাওরের বিভিন্ন স্থানের পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ পরীক্ষা করেন। উভয় দলের পরীক্ষায় পানির পিএইচ-৭, ডিও-৫.২ পিপিএম, অ্যামোনিয়া-১ পিপিএম পাওয়া যায়। মৎস্য বিভাগ হাকালুকি হাওরের অংশে অবস্থিত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এই তিন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার জেলের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এই তিনটি উপজেলায় আটটি বিল নার্সারির মাধ্যমে ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা ১৮ লাখ রুই, কাতলা, মৃগেলসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করছে, যা আগামী জুনের মধ্যে হাওরে অবমুক্ত করা হবে।
মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে হাওরের পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ পরিমাপ সন্তোষজনক। কয়েকদিনের মধ্যে জেলেদের হাওর থেকে মাছ আহরণের সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই মৌসুমে সারা জেলার হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার টন মাছ জলাশয়ে থাকে। যার মধ্যে হাকালুকি হাওরে ১৪ হাজার টন।