দিনাজপুর পৌরসভার ৬৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
দিনাজপুর পৌরসভার জন্য ৬৩ কোটি ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ২টায় পৌরসভার ফাতেহুল আলম দুলাল মিলনায়তনে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ওই বাজেট পেশ করেন। বাজেটে সমপরিমাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। মেয়র হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি বর্তমান পৌর পরিষদের পঞ্চম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে যার পরিমাণ ৫০ কোটি আট লাখ টাকা। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এই বাজেটকে একটি উদ্বৃত্ত বাজেট বলে উল্লেখ করেন। বাজেট বক্তব্যে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দিনাজপুর একটি সুপ্রাচীন জেলা শহর। এই প্রাচীন পৌরসভার পুঞ্জীভূত সমস্যা সহসাই নিরসন সহজসাধ্য নয়। আমাদের সাধ আছে সাধ্য নেই। পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়েনি, বরং বহুলাংশে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে পৌরবাসী নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে না। তাই কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে জনগণকে আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।’
বাজেট বক্তব্যে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি। আগামী দিনে নাগরিক সুবিধা কী হবে তার প্রতিফলন ঘটবে এই বাজেটে। বিগত সাড়ে চার বছরে পৌরসভার চলমান কর্মকাণ্ড পরিচালনা পরিষদ যথেষ্ট দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে একটি বাস্তবমুখী, উন্নয়ন ও জনকল্যাণকর বাজেট উপহার দেওয়াই আমাদের আজকের এ প্রয়াস।’
বাজেট বক্তব্যে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১৫-২০১৬ থেকে ২০১৯-২০২০ সাল পর্যন্ত পঞ্চমবার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্নির্ধারণকাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। পৌরবাসীর জ্ঞাতার্থে বহুল প্রচারের জন্য মাইকে ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বসাধারণকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি হোল্ডিংয়ের করদাতাদের নোটিশ করা হয়েছে। নতুন হোল্ডিংয়ের ট্যাক্স ধার্য করা হলেও বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ নতুন করারোপ বিষয়ে করদাতাদের কোনো আপত্তি থাকলে বিধিগতভাবে ট্যাক্স রিভিউ কমিটির মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হবে। তাই ধার্য করা করের দাবি না পাওয়া পর্যন্ত বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটবে না।
বাজেট বক্তব্যে পৌর মেয়র বলেন, পৌর এলাকা আলোকিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি বাল্ব, শেড ও সাধারণ বাল্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সব আইল্যান্ডের শ্রী বৃদ্ধি করা হয়েছে। শহর তথা যত্রতত্র শূকর ও কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ২০০টি কুকুর ও শূকর নিধন করা হয়। এতে শূকরের অবাধ বিচরণ বন্ধ হয়েছে এবং কুকুরের কামরানোসহ উপদ্রব থেকে পৌরবাসী রক্ষা পেয়েছে।
মেয়র তাঁর বাজেট বক্তব্যে বলেন, উচ্চস্বরে মাইকিং, ট্রাক্টরের বিকট শব্দ, অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা ওয়ার্কশপের আলোর ঝলকানি ও বিরক্তিকর শব্দ নাগরিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই অর্থ আগামী অর্থবছরে পৌরসভার রাস্তাঘাট মেরামত ও ড্রেন নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য চলতি অর্থবছরে পাঁচ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে এবং আরো ছয়টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন চলমান রয়েছে।
বাজেট বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে পৌর এলাকার জায়গায় দখল প্রবণতা এবং ব্যবসার মালামাল, নির্মাণ সামগ্রী ফুটপাত ও যত্রতত্র মালামাল ফেলে রাখার কারণে যানবাহন চলাচল, পানি নিষ্কাশন, আবর্জনা অপসারণ ও অন্যান্য পৌরসেবা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এসব সমস্যা সমাধানে পৌর পরিষদসহ পৌরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা চান পৌর মেয়র।
এর আগে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম গত এক বছরে পৌরসভায় যেসব নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, রুহের মাগফিরাত কামনা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
বাজেট অনুষ্ঠানে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুরাদ আহম্মেদ, কাউন্সিলর মো. মকবুল হোসেন, রবিউল ইসলাম রবি, জিয়াউর রহমান নওশাদ, মনিরুল ইসলাম বুলু, মাহমুদা খাতুন জোসনা, মাসতুরা বেগম পুতুল ও আবু তৈয়ব আলী দুলাল, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক, সচিব মো. মাহবুবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মীর তোফাজ্জল হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. লাইছুর রহমান চৌধুরী, উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. হাবিবুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শহিদুল হক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান সহকারী ও স্টোর কিপার মো. মজিবুর রহমান বাচ্চু, হিসাব রক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ সব বিভাগের প্রধান, বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।