চর দখলের সংঘর্ষে কৃষক নিহত, আহত ২০

Looks like you've blocked notifications!

বরিশালের হিজলা উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ করা চরের খাসজমি দখল ও ফসল লুট নিয়ে লাঠিয়ালদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ২০ কৃষক।

আজ শুক্রবার উপজেলার চর আবুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষকের নাম মোসলেম সরদার (৭০)। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন শাহে আলম, চান বক্স হাওলাদার ও আলীম দেওয়ান। তাঁদের হিজলার পার্শ্ববর্তী মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য, ভূমিদস্যুদের নিয়ে লাঠিয়ালরা ২০ থেকে ২৫টি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। এ ঘটনায় মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা শাহাদাত সিকদার, মিরাজ সরদার ও হারুন মুন্সী নামে তিন ‘ভাড়াটে লাঠিয়াল’কে আটক করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি টেটা উদ্ধার করা হয়েছে।

আহত কৃষক, প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হিজলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের চর আবুপুরে এক হাজার ২০০ একর খাসজমি রয়েছে। সেই জমি থেকে সরকার প্রত্যেক ভূমিহীন কৃষকের মধ্যে দেড় একর করে বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব জমি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বলে দাবি করে আসছে চর আবুপুর গ্রামের উত্তরপাড় এলাকার সোহরাব সিকদার, হান্নান বেপারী, সালাম মুন্সী, মোতাহার বেপারী ও খালেক মৃধাসহ আরো বেশ কয়েকজন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মজিবর রহমান সরদার ও বরাদ্দ পাওয়া কৃষকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। উভয় পক্ষ জমির দখল পেতে আদালতে মামলাও করেছে।

চলমান এই বিরোধের জেরে আজ সকাল ৯টার দিকে সোহরাব শিকদারের পক্ষে তিন শতাধিক লাঠিয়াল চারটি ট্রলারযোগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফসলসহ চর দখল নিতে আসে। তারা চর আবুপুর গ্রামের শেখ মুজিব বাজারে এসে বোমা বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ২০ থেকে ২৫টি গরুসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে।

খবর পেয়ে প্রতিরোধে নামে ওই এলাকার ভূমিহীন কৃষকরা। এ সময় লাঠিয়ালদের লাঠিপেটা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেকক কৃষক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর অবস্থায় মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোসলেম সরদার নামে এক কৃষকের অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাঁকে বরিশালের শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

শেবাচিমের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার খালেদ মাহমুদ জানান, নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

ওসি আরো জানান, এ ঘটনায় মামলা হবে। আটককৃতদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।