ঝিনাইদহে এক ‘আস্তানায়’ অভিযান শেষ

Looks like you've blocked notifications!

ঝিনাইদহের সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের যে বাড়িটি ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রেখেছিল, সেখানে প্রাথমিকভাবে অভিযান শেষ হয়েছে। তবে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’য় এখনো অভিযান চলছে।

সদর উপজেলার লেবুতলায় অভিযানে কেউ হতাহত হয়নি। একজনকে আটক করা হয়েছে সেখান থেকে। উদ্ধার করা হয়েছে বোমা ও পিস্তল।

আজ রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দিদার আহমেদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘লেবুতলা গ্রামের ওই বাড়ির মালিক শরাফত জোয়ারদার কলেজপড়ুয়া ছেলে শামীম জোয়ারদারকে আটক করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে আটটি হাতবোমা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।’

‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে আজ সকাল থেকে দুই উপজেলায় অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযান শুরু হলে সেখানে দুই ‘জঙ্গি’ নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্য আহত হয়েছেন বলে সকালে এনটিভি অনলাইনকে জানান মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদুল কবীর।

ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযানকালে বজরাপুর গ্রামের হঠাৎপাড়ার বাড়ির মালিক জহিরুল ইসলাম, তাঁর কিশোর ছেলে জসীম উদ্দিনসহ (১২) চারজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

জঙ্গিরা নব্য জেএমবির : ডিআইজি

এ দুই অভিযানের খবর পেয়ে ডিআইজি দিদার আহমেদ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মহেশপুরের বাজরাপুর গ্রামে আসেন। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন।

ডিআইজি এ সময় বলেন, ‘আগে থেকেই খবর ছিল, এখানে নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা রয়েছে। সদস্যদের সেখানে আনাগোনা করে। গতকাল কয়েকজন সদস্য সেখানে আসে। পরে রাতেই নিশ্চিত হয়ে ভোরে সেটি ঘিরে ফেলা হয়।’

‘সকালে অভিযান শুরু হলে পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়। এ সময় ভেতর থকে এক জঙ্গি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যান। আরেকজন পুলিশের গুলিতে মারা যান। বাড়িটি এখনো পুলিশ ঘিরে রেখেছে। তারা বাড়ির ভেতরে এখনো প্রবেশ করেনি।’

ডিআইজ আরো বলেন, ‘ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালাবে। তখন হয়তো বোঝা যাবে, সেখানে দুজনের বাইরে আরো কেউ আছে কি না।’

এদিকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং অভিযানের সুবিধার্থে বজরাপুর গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’র আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে কালীগঞ্জ-জীবনগঞ্জ সড়কের পাশে রয়েছেন। গ্রামটি ঘিরে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিকেলে সেখানে কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট এসে পৌঁছেছে।

‘ভিন্ন গ্রাম থেকে এসে আস্তানা বানায় জহিরুল’

বজরাপুর গ্রামের লোকদের সঙ্গে কথা বলে হঠাৎপাড়ার বাড়ির মালিক জহিরুল ইসলাম সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে। লোকজন জানান, জহিরুলের মূল বাড়ি কয়েক মাইল দূরের রহমতপুর গ্রামে। তাঁরা বজরাপুর গ্রামে ‘নওদা’ বা আগন্তুক। ১৩-১৪ বছর আগে তাঁরা এই গ্রামে এসে বাড়িঘর বেঁধে বসবাস শুরু করেন। এখানে তাঁদের কোনো জমিজমা ছিল না। তবে রহমতপুরে তাঁদের জমি ছিল কি না, তা জানেন না স্থানীয়রা।

বাড়িটির কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জহিরুলের বাড়িটি আধা পাকা। তবে তেমন শক্তপোক্ত নয়। দরজা-জানালা তেমন ভালো নয়।

বজরাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ও গৃহিণী ফাতেমা বেগম সকাল ১০টায় এনটিভি অনলাইনকে জানান, জহিরুল ইসলাম বাবার নাম নুরু বাঁশিওয়ালা। তিনি যাত্রাদলে বাঁশি বাজাতেন।

জহিরুল ফুসকার ব্যবসা করতেন। বাড়িতেই ফুসকা বানাতেন। এখানে আসার পর পরই জহিরুল বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই পাল্টাতে থাকেন তিনি। তাঁর স্ত্রী বাড়ির বাইরে বেরোতেন না। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রতিবেশী বা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের তেমন কোনো যোগাযোগ হতো না। লোকজন তাঁদের বাড়িও যেত না।

মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন ও গৃহিণী ফাতেমা বেগম দাবি করেন, জহিরুল আহলে হাদিসের অনুসারী। তাঁদের নামাজের কায়দা ভিন্ন। এটা গ্রামের লোকজন জানত। তবে গ্রামের লোকজন তাঁদের ভালো বলেই জানত। কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি ছিল না।

এলাকাবাসী জানান, সকালে অভিযান শুরুর পর সেখানে তাঁরা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন। এর পর আর কোনো শব্দ তাঁরা পাননি।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিপাড়ার ‘জঙ্গি’ আবদুল্লাহ ওরফে প্রভাতের বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধরা পড়েনি কোনো জঙ্গিও।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক ডিভাইস, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি, একটি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে।