‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে দুর্বলরা সহায়তা পাচ্ছে না’

Looks like you've blocked notifications!
নিহত হযরত আলীর বাড়িতে যান গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি : এনটিভি

গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পেলে হযরত আলীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো না। হযরত আলী নীরবে প্রতিবাদ করে গেছেন। এতেও যদি সমাজের বিবেক নাড়া দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছ থেকে সাধারণ এবং দুর্বলরা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।’

গতকাল বুধবার দুপুরে গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুরের সিটপাড়া গ্রামে হালিমার বাড়িতে এসে সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

হালিমার স্বামী দিনমজুর হযরত আলী গত ২৯ এপ্রিল শ্রীপুর রেলস্টেশনের পশুহাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় মেয়ে আয়েশা আক্তারকে (৭) নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। হালিমা অভিযোগ করেন, শিশু আয়েশা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও বিচার না পাওয়ায় এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ায় বাবা ও মেয়ে আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, মেয়ের শ্লীলতাহানির পাশাপাশি গরু চুরি যাওয়া, গবাদিপশু দিয়ে ফসলি জমির ক্ষতি করাসহ প্রতিবেশীদের হামলা ও হুমকির বিচার দিয়েও বিচার পাননি হযরত আলী।

ঘটনার একদিন পর হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম বাদী হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য আবুল হোসেনকে আটক করেছে। তবে ঘটনার প্রায় ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

হালিমার বাড়িতে গিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘শ্রীপুরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে কন্যাসহ বাবা আত্মহত্যার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ রকম ঘটনা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যন্ত এলাকায় অহরহ ঘটছে। অগণতান্ত্রিক সরকারের কারণেই দেশের মানুষ আজ বিচার পাচ্ছে না। রাষ্ট্রের কাছ থেকে সাধারণ এবং দুর্বলরা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের রাজনৈতিক অবস্থাটা স্বাভাবিক নেই, সুস্থ নেই। এতে গণতন্ত্র নেই। বর্তমানের রাজনীতি নষ্ট রাজনীতি। যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ  বলেন, ‘বিচার বঞ্চিত হয়ে হযরত আলী মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় জাতির বিবেককে যতটা নাড়া দেওয়ার কথা ছিল দরিদ্রতার কারণে ততটা নাড়া দেয়নি। জমি ও নারীর প্রতি লোভের কারণে হালিমার পরিবারের ওপর হামলা ও নীরব নির্যাতন হয়েছে। এটি নষ্ট সমাজের লক্ষ্মণ। আমাদের রাজনৈতিক দুর্বল জনগোষ্ঠী বিচারহীনতার জন্য দায়ী।’ তিনি শান্তি পূর্ণ সমাজ গড়ার জন্য স্থানীয় সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবি করেন। এ সময় তিনি হালিমার খোঁজখবর নিয়ে অবিলম্বে সকল অপরাধীকে আইনের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তাঁরা কাজ না করলে সমাজে দুর্বলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এ কারণেই দুটি মানুষ জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করে গেছে। এটি বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদ। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাঁদের পাশে থাকব।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।