কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩

কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগ শেষ হয়নি। তারা বাড়ি ফিরতে পারছে না। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বন্যার পানিতে ভেসে, পাহাড়ধস, দেয়ালচাপা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সাহায্য বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা খুবই অপ্রতুল। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চাল, চিড়া, গুড়ের পাশাপাশি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যাকবলিত চার উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নে পানি নেমে গেছে। বাকি ১২ ইউনিয়নে এখনো চার-পাঁচ ফুট পানি রয়েছে। সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার রামু, চকরিয়া, পেকুয়া ও কক্সবাজার সদরের ৪০টি ইউনিয়নের দেড়শ গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল চার লাখ মানুষ। বন্যাকবলিতরা সরকারি-বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। তারা চরম খাদ্যসংকটে পড়ে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম জানিয়েছেন, চকরিয়ায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজন মারা গেছেন। মৃতদেহগুলো শনিবার রাতেই উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দুর্গত এলাকার মানুষের বাড়ি ফিরতে সময় লাগবে। বন্যাকবলিতরা এখনো আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে অবস্থান করছে।
চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া গ্রামে গতকাল দুপুরে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে সুবর্ণা দাশ (৩০) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিকেল ৫টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
চকরিয়া ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, ইউনিয়নের মালুমঘাট ডুমখালীর মিঠাছড়ি এলাকায় গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়িতে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে কামাল উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, বন্যায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে ও দেয়ালচাপা পড়ে এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
রামু রাজারকুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, বন্যার ফলে রামুর রাজারকুলে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক ভেঙে গেছে। ব্রিজ ভেঙে গেছে। মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এ এম রহিমুল্লাহ জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী, খরুলিয়া, ঈদগাঁও, ইসলামপুর, পোকখালী, বাংলাবাজার ও ভারুয়াখালী এলাকায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ।
কক্সবাজার-টেকনাফ বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি শামসুল হুদা টাইটেল জানিয়েছেন, কক্সবাজার-টেকনাফ যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে ঝুঁকি নিয়ে কিছু বড় যান চলাচল করছে। রামুর চেইন্দা এলাকার মহাসড়ক এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, পেকুয়া সদর, মগনামা, শিলখালী ইউনিয়ন বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘর এখনো পানির নিচে রয়েছে। এখনো অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, সরকারি ১৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৫ হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নেয়। বেসরকারিভাবে বাকি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। দুর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১৪৫ টন চাল, ৯৫ বস্তা চিড়া, ৯০ বস্তা গুড় ও ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে।