জাবিতে জানাজা হলো না দুই শিক্ষার্থীর, ক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই শিক্ষার্থীর লাশ ক্যাম্পাসে এনে জানাজা না করায় তীব্র  ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণেই ক্যাম্পাসে জানাজা হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বলছেন, নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের অনিচ্ছার কারণেই লাশ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়নি।

গতকাল শুক্রবার ভোরে সাভার থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটায় নিহত হন ওই দুই শিক্ষার্থী।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে তাদের বুঝাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক) যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আবুল হোসেন ও রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় তাঁরা ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন।  তাঁরা বুঝানোর চেষ্টা করেন, নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের অনাগ্রহের কারণে ক্যাম্পাসে জানাজা হয়নি। এ কথার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

এ সময় এক শিক্ষার্থী বলে ওঠেন, ‘ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষকের জানাজাও হবে না।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরিবারের মগজ ধোলাই দিলে তাঁরা রাজি হবে কীভাবে। তাদের বুঝানো হইছে, ক্যাম্পাসে লাশ আনলে নিরাপত্তার সমস্যা হবে।’

এ সময় জয় বাংলা গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘প্রশাসনের অনিচ্ছার কারণেই ক্যাম্পাসে জানাজা হয়নি। এটা খুবই খারাপ লাগছে। এই যে ছাত্ররা শিক্ষকদের গালাগালি করছে, কমিউনিটি হিসেবে এটা আমার গায়ের ওপরও আসছে। তাঁরা যে বলছে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষকের জানাজা পড়বে না, এটা অত্যন্ত যৌক্তিক। সহপাঠীর জানাজা পড়তে না পারলে তাঁরা কেন শিক্ষকদের জানাজা পড়বে!' সঙ্গে থাকা অন্য আরেকজন শিক্ষকও সায় জানান এ কথায়।

ফেসবুকে ক্ষোভ

পাইরেটস লিমন নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, 'অতঃপর ছুটির আমেজে শিক্ষার্থীরা জানতেই পারল না যে, কারো বড় ভাই, কারো ছোট ভাই, কারো বন্ধু মৃত দুই শিক্ষার্থীর কপালে ক্যাম্পাসে জানাজা জুটল না।'

ইমরান হোসাইন নামের একজন লিখেছেন, 'আমার ভাইয়ের লাশের জানাজা যখন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ী,,, তখন ধিক্কার জানাই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে। আজ যদি ছাত্র হয়েও আমরা জানাজা না পড়তে পারি, তাহলে এরপর থেকে ক্যাম্পাসে আর কোনো শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীর জানাজা হবে না।’

রনি আহামেদ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, 'দুজন ছাত্র মারা গেছে তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেন নাই... তাদের লাশের জানাজা ক্যাম্পাসে করতে দিবেন না কারণ নিরাপত্তা দিতে পারবেন না, তাহলে আপনাদের কাজটা কী হে জাবি প্রশাসন...???'

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

নাম না প্রকাশ করার শর্তে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা পরিবারকে কনভিন্স করেছিলাম, তাঁরা রাজি ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো আগ্রহ ছিল না। স্যাররাই পরিবারকে বিভিন্ন কথা বলে বুঝিয়েছেন, ক্যাম্পাসে লাশ না আনার ব্যাপারে।’

এই ছাত্র নিহত শিক্ষার্থীদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সময় এনাম মেডিকেল কলেজে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর লাশ ক্যাম্পাসে না আনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক) থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

এ ব্যাপারে নিহত শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেনের লাশ গ্রহণকারী আত্মীয় বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইয়াহিয়া ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আপনারা যা ভালো মনে করেন। তবে ক্যাম্পাসে গেলে তো একটু দেরি হবে, স্বাভাবিক।’

প্রশাসনের অনাগ্রহ ছিল কি না জানতে চাইলে আরাফাত হোসেনের আত্মীয় বলেন, 'ইউ আর ম্যাচিউরড এনাফ। সেটা তো প্রশাসনের কিছুটা অনাগ্রহ থাকতেই পারে। কারণ তারা হয়তো চিন্তা করেছে ক্যাম্পাসে লাশ নেওয়া হলে এটাকে কেন্দ্র করে কোনো অকওয়ার্ড সিচুয়েশনের (বাজে পরিস্থিতি) সৃষ্টি হতে পারে।'

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, 'জানাজা দিতে দেওয়া হয়নি, এটা ভুল কথা। পরিবারের ইচ্ছেতেই লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবার ও বিভাগ যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই।'

গতকাল ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় আল বেরুনী হলের মার্কেটিং বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের ছাত্র নাজমুল হাসান রানা ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আরাফাত হোসাইন ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। অটোরিকশা যোগে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় এক যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে তাঁদের ধাক্কা দেয়। তাঁরা সাভারের কলমায় অবস্থিত মার্কাস মসজিদ থেকে তাবলীগ জামায়াত শেষ করে ফিরছিলেন।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই রানা মারা যান। গুরুতর আহত আরাফাত সাভার এনাম মেডিকেল কলেজে আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে মারা যান।