রাজীব হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

Looks like you've blocked notifications!

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ রোববার রায় রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৬৩ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

গত ২ এপ্রিল রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় দুজনকে ফাঁসি ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট ।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের স্বাক্ষরের পর  আজ এ রায় প্রকাশ করা হয়। 

 নিম্ন আদালতের দেওয়া তিনজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, একজনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অপর একজনকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া রায়ও বহাল রাখেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘একজন মসজিদের ইমামের দায়িত্ব হলো মুসলমানদের কাছে ইসলামের সঠিক জ্ঞান পৌঁছে দেওয়া। তিনি এমন কোনো জ্ঞান বা বয়ান দেবেন না, যা প্রচলিত ফৌজদারি আইনের পরিপন্থী।’

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘যদি কেউ ইসলাম ধর্ম, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বা অন্য কোনো ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই।’ 
শরিয়া আইন প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় রয়েছে।’

দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এ মামলা যুক্তিতর্ক ও মামলার নথি অনুযায়ী দেখা গেছে, মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানী ছাড়া সব আসামিই ছিলেন মেধাবী। কিন্তু তাঁরা এ পথে কেন গেলেন, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের মেধাবী ছাত্রদের বিপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার অন্যতম দায়ী বলে মনে করেন আদালত।’

আদালত আরো বলেন, ‘বর্তমানে পরিবারগুলো জীবনের বিভিন্ন তাগিদ নিয়েই ব্যস্ত। নিজেদের সন্তানদের খোঁজখবর নেওয়া ও তাদের সঠিক পথে পরিচালনার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছে না। সন্তানদের মানসিকতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা কী চায়, তা বুঝতে হবে।’

আদালত বলেন, ‘শিশুদের মানসিক অবস্থার কথা, তারা কী করতে চায়, কোন বিষয়ে পড়তে চায়, তা না জেনে তার মনের বিরুদ্ধে অনেক কিছু চাপিয়ে দেন অভিভাবকরা। এই কাজের জন্য প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবেশ, রাজনীতি, ধর্মীয় আচার-ব্যবহার, স্বাধীনতার ইতিহাস যথাযথভাবে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দেশীয় অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে। এ নিয়ে সবার এবং সরকারেরও ভাবতে হবে।’

পুলিশের মহাপরিদর্শকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠ ও দক্ষ পুলিশ সদস্যকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে করে নির্ভুলভাবে তদন্তের কাজ হয়।’

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। একদল লোক হত্যাকাণ্ডে সরসরি অংশ নিয়েছে। অন্যরা তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাই বিচারিক আদালতের রায় পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পায়নি। সেই জন্য বিচারিক আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়েছে।’

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে রাজধানীর পল্লবীতে তাঁর বাসার সামনে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলায় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

রায়ে মাকসুর হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামি সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ রায়ের পর মামলার নথি গত ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে আসে। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।