‘মোরা’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু

Looks like you've blocked notifications!

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করেছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এ সংক্রান্ত একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। কক্সবাজারের দুর্গম বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় সাত নম্বর বিপদ সংকেতের বার্তা জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সাগরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে আবহাওয়ার ‘মোরা’ সংক্রান্ত সর্বশেষ ৯ নম্বর বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমাগতভাবে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এটি আরো ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।  এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।

‘মোরা’র কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে শামসুল হক হায়দরী ও আরিচ আহমেদ শাহ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং সর্বশেষ তথ্য জানাতে বন্দরে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আদুল গাফ্ফার।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সকালে বন্দরের সদস্য প্রকৌশল কমোডর জুলফিকার আজিজের সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সকল বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিপদ সংকেত পর্যালোচনা করে বন্দরে এলার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। এর ফলে বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত সব ধরনের জাহাজকে ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই সাগরে চলে যেতে হবে।

এ দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত করণীয় নিয়ে জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। দুপুরে আদালত ভবনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতা সমাজসেবামূলক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কক্সবাজার প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী টিপু জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন বৈঠক করছে। এতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন। উপকূলের সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোংলা প্রতিনিধি আবু হোসাইন সুমন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার বিভাগের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বন্দরে সকাল থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে। জাহাজগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোংলা বন্দর ও এর আশপাশের এলাকার আবহাওয়া স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এ দিকে সকালে আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।

আজ সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা বা ঝড়ো হাওয়ায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।  

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর ও এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার অদূরবর্তী চর ও দ্বীপগুলো ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

‘মোরা’র প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর জেলায় চর ও নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।  

এদিকে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

আগামীকাল ‘মোরা’ অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর এসব উপকূলীয় জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।