মোংলায় ৮ নম্বর বিপদসংকেত, খোলা হয়েছে ৪২ আশ্রয়কেন্দ্র

Looks like you've blocked notifications!

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় মোংলায় ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বন্দরের সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সভায় শেষে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান জানান, বন্দরে থাকা দেশি-বিদেশি জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাসের কাজ আজ দুপুর ২টা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বন্দর জেটির কনটেইনার ইয়ার্ডের কাজ চলছে। জাহাজসহ অন্য নৌযানগুলো শক্তভাবে নোঙর বা অ্যাংকোরেজ বেঁধে সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

ফারুক হাসান বলেন, বন্দরের হারবার বিভাগে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। নৌযান দুর্ঘটনা এড়াতে বন্দরে একটি উদ্ধারকারী টাগবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

মোংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম জানান, আজ সকালে জরুরি বৈঠক করে উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সতর্কবার্তার জানাতে মাইকিং প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 

ইউএনও বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবন খোলা রাখা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার মজুদ করা হয়েছে।  

এদিকে মোংলা পোর্ট পৌরসভাও একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের মাইকিং প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 

আজ সোমবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে উপকূল থেকে অধিবাসী ও গবাদি পশু সরানোর কাজ শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরো সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় (২৯ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে কাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।