মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদীর ১১ স্থানে ভাঙন

Looks like you've blocked notifications!
মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদীর ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ঘটেছে। মনু নদীর ছয় স্থানের ভাঙন দিয়ে ও ধলাই নদীর নতুন এবং পুরাতন পাঁচটি ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১০টি স্থানে মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বন্যায় আক্রান্ত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।

কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া, রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের উজিরপুর ও কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর চাটি কোনাগাঁও এবং কোনাগাঁও এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে ওই এলাকার ৬০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ খোলা আকাশের নিচে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

অপরদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা ও নাজাতকোনায় নতুন করে ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে।

এ ছাড়া কমলগঞ্জ পৌর এলাকার পুরোনো ভাঙন দিয়ে উত্তর আলেপুর, বাদে করিমপুর ও করিমপুর এলাকায় ধলাই নদীর ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে অন্তত ৪০ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন দেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানালেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এলাকার সাধারণ মানুষের উদ্যোগে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে তারা।

শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী জানান, শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এই ভাঙনের পানি মৌলভীবাজার শহরে গিয়ে পৌঁছাবে। ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ সম্ভব হয়নি। চাতলাঘাট এলাকায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ না করলেও মনু নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজটি মনে হয় আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালিক জানান, ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া ও খন্দকারের গ্রাম এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ভাঙনরোধে চেষ্টা চালাচ্ছে।

কামারচাক ইউপির চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম জানান, সেহরির পর কোনো একসময়ে ভোলানগর এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ভোলানগর, মিটিপুর, শ্যামল কোনা ও করাইয়ার হাওর এলাকায় কমপক্ষে ১৫ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়। ভোলানগর গ্রামের যে স্থান দিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে, সেই ভাঙনের মুখে ফারুক মিয়ার বাড়িটি নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।

চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পাউবোকে বারবার বলার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন এই ভয়াবহ বিপদ হলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মকলিছুর রহমান জানান, মনু নদীর পানি আজ বিকেলে মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং মনু রেলওয়ে সেতুর কাছে ৭৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপর দিকে কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া চাতলাপুর, টগরপুর, কামারচাক, রনচাপ, ভাঙ্গারহাটসহ আরো কয়েকটি স্থানে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।