পানি কমলেও দুর্ভোগে তিস্তার বানভাসি মানুষ

Looks like you've blocked notifications!

তিস্তার পানি বইছে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে। কিন্তু তাতে কমেনি বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। কয়েক দিন ধরে চলা তিস্তার সর্বনাশা রূপ শান্ত হলেও আতঙ্কে আছেন তিস্তা তীরবর্তী নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার মানুষ।

আজ শুক্রবার শেষ রাত থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিস্তার পানি ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, খরস্রোতা তিস্তা এখন শান্ত থাকলেও আবার কখন ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে ভাসবে তিস্তার অববাহিকা—এ আশঙ্কা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে। তিস্তা শান্ত হলেও রেখে গেছে তার বিধ্বংসী চিহ্ন।

প্রকৃতির নিষ্ঠুরতায় বিপন্ন তিস্তা অববাহিকার হাজার হাজার বানভাসি মানুষের জীবন। উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ধ্বংস হয়েছে বিভিন্ন চর ও গ্রামের বসতিসহ চাষের জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে যৌথ বাঁধ, মাটির চারটি ক্রস বাঁধ। হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তার ডান তীরের বাঁধ। সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ।

গাছপালা, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ভেসে গেছে নদীর স্রোতে। তিস্তা অববাহিকার জীবনধারণের অন্যতম জীবিকা মাছ চাষের পুকুরে পানি ঢুকে বেরিয়ে গেছে সব মাছ। ফলে মৎস্যচাষিদের বেড়েছে লোকসানের বোঝা। আর শুধু এ খাতেই ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

তিস্তার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে দিন কাটাচ্ছেন রাস্তা, স্কুলঘর অথবা বাঁধে। গৃহপালিত পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বাড়ি ছেড়ে যেন যাযাবরের মতো দিনযাপন করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে।

গত তিন দিনের বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে তিস্তাপাড়ের ২৫টি গ্রাম ও চর। নদীর পাড় ভাঙার সঙ্গে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলো পরিণত হয়েছে ছিন্নমূলে। এ ছাড়া জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ২৫টি গ্রামও বিধ্বস্ত।

ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী গ্রামে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বাঁধের মাটির অংশটি প্রায় এক হাজার মিটার বিধ্বস্ত হয়।

এ ছাড়া তিস্তার প্রবল স্রোতের কারণে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ীর তিনটি মাটির রাস্তা ও খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের তিনটি মাটির রাস্তা ভেঙে পড়েছে।

আকস্মিক বন্যায় নিজের শেষ সম্বলটুকুও সংরক্ষণ করতে পারেননি তাঁরা। নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করার কোনো বন্দোবস্তই করতে পারেননি এ অঞ্চলের মানুষ। রোজার মাস হওয়ায় এ দুর্ভোগ আরো চরমে। অনেককে না খেয়েই রাখতে হয়েছে রোজা।

এদিকে, জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য ত্রাণ নিয়ে চলছে কার্যক্রম। বন্যার্তদের দাবি, তাঁরা ত্রাণ চান না। রাস্তা ও বাঁধ মেরামত করার দাবি জানান তাঁরা।

ডিমলার ইউএনও রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন জানান, ডিমলা উপজেলার বন্যাকবলিত সাতটি ইউনিয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আট টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।