দেশের জন্য ক্যাপ্টেন তানভীর, তাঁর শোকে দাদার মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!
দাদা হাজি আবদুল আজিজ মোল্লার সঙ্গে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের পর উদ্ধারকাজে জীবন দেওয়া ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত। তাঁরা দুজনই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ছবি : সংগৃহীত

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের পর দেশের কাজে জীবন দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত (২৭)। আর তাঁর শোকে প্রাণ দিলেন প্রিয় দাদা হাজি আবদুল আজিজ মোল্লা (৮৩)।

বৃদ্ধ আবদুল আজিজ মোল্লা আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের সিংহেরকাঠি গ্রামে নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

গত মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি শহরের মানিকছড়িতে পাহাড়ধসের পর উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে নিহত হন ক্যাপ্টেন তানভীরসহ পাঁচ সেনাসদস্য। ওই খবর শুনে সিংহেরকাঠি গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় মাতম। নাতির শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন দাদা আবদুল আজিজ মোল্লা। নাতির সঙ্গে তাঁর একটি ছবি নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। আজ সকাল ৯টার দিকে তিনি হঠাৎ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

তানভীরের চাচা মালেক মোল্লা জানান, আগামীকাল শুক্রবার সকালে তানভীরের দাদা হাজি আবদুল আজিজ মোল্লাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

তানভীরের ভাবি সোনিয়া জানান, তানভীর ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে পাস করে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে কমিশনপ্রাপ্ত হন। গত বছরের ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর তানভীর জয়পুরহাট জেলার নাজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করেন। বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় থাকতেন।

ফুফু আলেয়া বেগম জানান, গত বছর আইভরি কোস্টে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তানভীরের একটি পা ভেঙে যায়। সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার কাজে ফেরেন।

এ দিকে রাঙামাটির মানিকছড়িতে পাহাড়ধসের পর উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় নিহত মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ও ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্তর দাফন আজ বৃহস্পতিবার বনানী সামরিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় সম্পন্ন হয়।

এ সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) মেজর জেনারেল  নাজিম উদ্দীনসহ নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। এ ছাড়া স্বজনদের ইচ্ছানুযায়ী কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হককে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ও সৈনিক মো. শাহিন আলমকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, রাঙামাটির মানিকছড়িতে গত মঙ্গলবার ভোরে একটি পাহাড়ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলার সময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থলসংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ভূমি ধসে পড়ে সৈনিক মো. আজিজুর রহমান নিখোঁজ থাকেন। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

আজ সকালে আজিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়।