সাকিবকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা

Looks like you've blocked notifications!
দুইদিন ধরে আদরের ছেলে সাকিব হোসেন নিখোঁজ। আরেকটু হলেই পাচার হয়ে যেত ভারতে। সেই ছেলেকে নিয়ে বাবা জসিম উদ্দিন। আজ মঙ্গলবার ঝালকাঠির পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। ছবি : এনটিভি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার জসিম উদ্দিনের ছেলে সাকিব হোসেন। বয়স পাঁচ বছর। প্রতিদিনের মতো গত রোববার সে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে ঘর থেকে বের হয়। ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে তাকে অপহরণ করে দুই দুর্বৃত্ত।

কিন্তু নিজের বুদ্ধিমত্তায় রক্ষা পায় শিশুটি। গতকাল সোমবার ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রায়াপুর গ্রাম থেকে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাকিবকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে হাসান মৃধা নামের একজনকে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমান অপহৃত সাকিবকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেন। 

এ সময় সেখানে আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সাকিবকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা জসিম উদ্দিন। পরম মমতায় কোলে তুলে আদর করেন। 

ঝালকাঠির পুলিশ ও শিশুটির বাবা জানান, গত রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার কলাপাড়া গ্রাম থেকে শিশুটিকে অপহরণ করে দুই যুবক। বাসা থেকে বের হয়ে খেলার মাঠে গেলে শিশুটিকে তার বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয়। এরপর শিশুটিকে লঞ্চে করে বরিশালে নিয়ে আসেন হাসান মৃধা। সোমবার সকালে তিনি শিশুটিকে নিয়ে লঞ্চ থেকে নেমে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে করে সাতক্ষীরায় ভারত সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হয়।
মোটরসাইকেলটি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রায়াপুর গ্রামে এলে শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করে। শিশুর কান্না শুনে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এ সময় শিশুর কাছে গিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানতে পারে তারা। স্থানীয়রা খবর দেয় পুলিশকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) এম এম মাহামুদ হাসান ও নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহামুদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আটক করে অপহরণকারী হাসান মৃধাকে। হাসান মৃধার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কচুয়া গ্রামে।

এরপর শিশু সাকিব ও অপহরণকারী হাসান মৃধাকে পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমানের কাছে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সুপার দুজনের সঙ্গে কথা বলে। শিশুটি জানায়, তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন। তাদের বাড়ি আশুগঞ্জ। হাসান মৃধা পুলিশ সুপারকে জানান, তিনি ও আরেক যুবক শিশুটিকে আশুগঞ্জের কলাপাড়া গ্রাম থেকে অপহরণ করেছেন। তাঁর কাজ ছিল শিশুটিকে ভারত সীমান্তের কাছে পৌঁছে দিয়ে আরেক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া। এরপর পুলিশ সুপার জোবায়েদুর রহমান আশুগঞ্জ থানায় কথা বলেন। জানতে পারেন, সাকিব হোসেন নামের এক শিশু নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ওই জিডির সূত্র ধরে পুলিশ সুপার সাকিবের বাবা জসিম উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন এবং সাকিবের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। পুলিশ সুপার তাঁকে দ্রুত প্রমাণসহ তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। ওই ফোন পেয়ে জসিম উদ্দিন আজ সকালে ঝালকাঠি চলে আসেন। 

এদিকে উদ্ধারের পর শিশু সাকিবকে পরম মমতায় আগলে রাখেন পুলিশ সুপার জোবায়েদুর রহমান। তিনি ঈদুল ফিতরের জন্য শিশুটিকে নতুন পোশাক কিনে দেন। শিশুটিকে ভালো খাবার-দাবার দেওয়া হয়। 
পুলিশ সুপার জোবায়েদুর রহমান জানান, শিশু সাকিবকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে না পাঠিয়ে সোমবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাসায় রাখা হয়। সেখানে বসে শিশুটি মুঠোফোনে তার মায়ের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে। 

এদিকে আজ সকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হন সাকিবের বাবা জসিম উদ্দিন। বাবাকে দেখে তার মধ্যে চাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। ছেলেকে পেয়ে কোলে নিয়ে বুকে টেনে নেন তিনি। বেরিয়ে আসে আনন্দঅশ্রু। 

জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে বাসা থেকে বের থেকে হয়ে পাশের মাঠে খেলা করছিল। তাকে ফুসলিয়ে আমার কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে আসছে। পুলিশ বাহিনীর তৎপতার কারণে আমি আমার ছেলেকে পেয়েছি। এসপি স্যার আমার ছেলের জন্য আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। তিনি আমার ছেলেকে নিজের ছেলের মতো স্নেহ দিয়ে রেখেছেন। আমি ওনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’