মৈনটঘাটে শিক্ষক বাবার আহাজারি

‘আমার যে আর কিছুই রইল না’

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার দোহার উপজেলার মৈনট ঘাটে পদ্মার ওই খানে ডুবেছে একমাত্র ছেলে সালমান বিন জামাল। হাত দিয়ে দেখাচ্ছেন বাবা ড. জামাল উদ্দিন। ছবি: মোহাম্মদ ইব্রাহিম

ঢাকার দোহার উপজেলার মৈনটঘাটে আজ বুধবার সকালে পদ্মার দিকে হাত দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন এক বাবা। নাম ড. জামাল উদ্দিন, ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক। বারবার বলছিলেন, ‘আমার বাছাধন অবশ্যই ফিরে আসবে। আমার যে আর কিছুই রইল না।’

গতকাল মঙ্গলবার মৈনটঘাটে পদ্মায় গোসল করতে নেমে নিখোঁজ এক ছাত্র সালমান বিন জামালের (১৯) বাবা জামাল উদ্দিন। ছেলের সন্ধানে আজ সারাদিন সেখানে ছিলেন তিনি। কিন্তু একমাত্র ছেলে, আদরের ধনকে পাননি। সন্তানকে ফিরে পেতে আজ মাঝে মধ্যে তাঁকে আহাজারি করতে দেখা যায়। কখনো ছিলেন শোকে পাথর হয়ে।

জামাল উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমার একটি মাত্র ছেলে। আমি কী নিয়ে বাঁচব? ছেলে আমাকে বলেছিল, ‘বাবা আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছি।’ এখানে আসবে তা আমি জানতাম না। ওরা কেউ সাঁতার জানে না। শুনেছি, তিনজন পানিতে নেমে গোসলের সময় চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। আমার যে আর কিছুই থাকল না।”

এদিকে আজ সকালে এক শিক্ষার্থীর লাশ ‍উদ্ধার হলেও বাকি দুই ছাত্রের খোঁজে এখনো উদ্ধারকাজ অব্যাহত রেখেছেন ডুবুরিরা।

বেলা ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌবাহিনীর নেতৃত্বাধীন ডুবুরির দল উদ্ধারকাজ করছে। পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ছাত্রদের স্বজনরা। ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়ও।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা নিখোঁজ দুই ছাত্রের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছেন। ডুবুরির দল গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে। আজ রাত ১১টা পর্যন্ত তাদের উদ্ধার অভিযান চলে। দুই ছাত্রের কোনো হদিস না পাওয়ায় কাল সকালে আবার অভিযান শুরু হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তিন ছাত্রকে উদ্ধারে আমরা দুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আজ সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়েও বাকি দুই ছাত্রের সন্ধান পাইনি। অভিযান স্থগিত করে কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আবার অভিযান চালানো হবে।’

যোগাযোগ করা হলে দোহার থানার চর মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আরব আলী জানান, আজ সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নদীতে মহিম নামের এক ছাত্রের লাশ পাওয়া যায়।  মহিম ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহআলমের ছেলে। তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়তেন। তাঁর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া ঢাকার মিরপুরের নাসির ঢালীর ছেলে মিরপুর কমার্স কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির সুপ্রিয় ঢালী (১৯) এবং মিরপুরের বড়বাগ এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির সালমান বিন জামাল এখনো নিখোঁজ।

ঈদের পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে মহিমসহ পাঁচজন ঢাকা থেকে দোহারের মৈনট ঘাটে পদ্মার পাড়ে বেড়াতে যান। মৈনট ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ঝাঁওকান্দি এলাকায় তাঁরা নদীতে নামেন। এক পর্যায়ে তিনজন তলিয়ে যান। ঘটনার পরপর পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল  নিখোঁজদের সন্ধানে পদ্মায় তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে রাত ১২টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।

গত বছরও ঈদের ছুটিতে মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে পদ্মায় ডুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রসহ আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়।