মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দুর্ভোগ বাড়ছে

Looks like you've blocked notifications!

মৌলভীবাজার জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।

বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে পানি না নামায় প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগব্যাধিও বাড়ছে। এসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্থরের ১৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সয়রা মহসীন ও জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যা আক্রান্ত এলাকায় প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত হয়েছে।

অপরদিকে, ত্রাণ হিসেবে বন্যাদুর্গত এলাকায় গম বিতরণ করায় মানুষ পড়েছেন বিপাকে। গম শুকানো ও ভাঙানো একটা বাড়তি ঝামেলা।

জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ত্রাণ হিসেবে বন্যাদুর্গত এলাকায় গম বিতরণে মানুষের সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তিনি কথা বলেছেন। পরে গম এ জেলায় দেওয়া হবে না বলে জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেরপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বন্যাদুর্গত জুড়ী উপজেলার ইউসুফপুর, শাহাপুর, খালের মুখ, চালবন, শিমুলতলা, কুলাউড়া উপজেলার নিঃশংকপুর দেখিয়ারপুর, সোনাপুর, আমতৈল ও বড়লেখা উপজেলার হাল্লা, পাবিজুড়ী, কুটাউড়া, ইসলামপুর এলাকা পরিদর্শন গেলে ওই সব এলাকার মানুষ পানির সঙ্গে ঢেউয়ের মধ্যে যুদ্ধ করে আছেন নিজগৃহে। এক মাস ধরে বন্যার পানি স্থায়ী হলেও বন্যার্তদের জানা নেই কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ টিউবঅয়েল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির রয়েছে অভাব। পানি কিছুটা কমলেও বাড়িঘরে তিন-সাড়ে তিন ফুট পানি রয়েছে। ঘরের চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। তাই রান্নাবান্না খাটের ওপর। বাড়িঘরে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ‘বেসরকারিভাবে কে কীভাবে ত্রাণ দেয় তা আমাদের কেউ জানায় না।’ তাঁর এলাকার সদিপুর গ্রামে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তবে লোকসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

নৌকা দেখলেই ঘরের ভেতরের হাঁটু ও কোমর পানি ডিঙিয়ে আঙিনা বেরিয়ে পড়ছেন অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এই বুঝি কেউ ত্রাণ নিয়ে আসছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় মলিন মুখে খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হয়।