সেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্তে মন্ত্রণালয়
সচিবের কাছে অপমানিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার ঘটনায় সেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মুক্তযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যুগ্ম সচিব শেখ মিজানুর রহমানকে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আত্মহত্যার প্ররোচনা দানকারী হিসেবে এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) নথিপত্র পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান আত্মহত্যা করেন। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন।
আজ মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
‘আত্মহ্যত্যার আগে তিনি যে সুইসাইডাল নোট রেখে গেছেন, আমি তাঁর কথা শুনেছি। পূর্ণাঙ্গ চিঠির কপি ও প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাঁকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সুইসাইডাল নোটটি পেলে বুঝতে পারব তিনি কেন টাকা দিয়েছিলেন, কত টাকা দিয়েছিলেন, কার মাধ্যমে দিয়েছিলেন বা আদৌ টাকা দিয়েছিলেন কি না।’ যোগ করেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। মৃত্যুর আগে সচিবকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি লিখে গেছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সচিব যদি অপরাধ করে থাকেন বা আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে থাকেন, এটি যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে চাকরির বিধি লঙ্ঘনের দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারব। তিনি যদি আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে থাকেন, সেটা ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধ খতিয়ে দেখার জন্য এরই মধ্যে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই অপরাধের বিচার করবেন আদালত।’ তিনি জানান, সব কিছুই হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে। সবাই যাতে ন্যায়বিচার পান সেটা নিশ্চিত করা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর ১৫ দিন আগে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান রাজধানীর তোপখানা রোডের কর্ণফুলী হোটেলে উঠেছিলেন। গত মঙ্গলবার সকালে হোটেলের ওই কক্ষ থেকে কীটনাশকের গন্ধ এলে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নজরে আসে। পরে কর্তৃপক্ষ কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আধাঘণ্টা পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ হোটেল কক্ষ থেকে ওই চিরকূটটি উদ্ধার করে। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ধরে ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়কে খবর দেয়। এ ঘটনায় রাতেই শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে দায়ী করেছেন তাঁর স্বজনরা। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার নোটের সূত্র ধরে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সচিব এম এ হান্নান ওই ঘটনার সঙ্গে নিজের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন।
এই আত্মহত্যার নোটে লেখা আছে, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে টাকা দিয়েছিলেন আইয়ুব খান। পরে বারবার আবেদন করার পরও তিনি দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণা করেননি। তাঁর বাসায় গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি গলাধাক্কা দিয়ে অপমান করে বের করে দেওয়ায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।