বিরোধীদের ফাঁসাতে পাঁচ মাসের শিশুর গলা কাটেন চাচা!

Looks like you've blocked notifications!
মৌলভীবাজার পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শুক্রবার শিশু ইভা হত্যাকাণ্ডের রহস্য সমাধানের কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম উদ্দিন। ছবি : এনটিভি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় পাঁচ মাসের শিশু ইভাকে গলা কেটে হত্যার রহস্য পাঁচ বছর পর সমাধানের দাবি করেছে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই ইভাকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেছেন তার চাচা আবুল মিয়া (৩৩)। মা বিরু বেগমের (ইভার দাদি) নির্দেশে এ কাজ করেছিলেন বলে জানান তিনি।

গতকাল শুক্রবার মৌলভীবাজার পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম উদ্দিন।

২০১২ সালের ১৪ আগস্ট কুলাউড়া উপজেলার ইসলামনগর গ্রামে ইভাকে হত্যা করা হয়।

আসলাম উদ্দিন জানান, কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের নিজাম মিয়া (৩৭) ও তাঁর ভাইদের সঙ্গে একই গ্রামের মাসুক মিয়া (৪৫) ও তাঁর ভাইদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল।

২০১২ সালের ১৪ আগস্ট মাসুক মিয়া দলবল নিয়ে বিরোধী পক্ষের জমিতে যায়। সে সময় নিজাম মিয়ার স্ত্রী রুবিনা বেগম তাঁর মেয়ে মীমকে কোলে নিয়ে সেখানে গিয়ে বাধা দেয়। তখন মাসুক মিয়া ও তাঁর লোকজন রুবিনা বেগমকে মারধর করে।

এ সময় নিজামের মা বিরু বেগম  ইভার লাশ হাতে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, মাসুক ও তাঁর সহযোগীরা ইভাকে হত্যা করেছে। পরে নিজাম মিয়া বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা করেন।

কুলাউড়া থানার দুজন উপপরিদর্শক (এসআই) মামলা তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে কুলাউড়া থানা পুনরায় তদন্ত করে এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বাদীর আবার নারাজির ভিত্তিতে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখাকে নির্দেশ দেন।

জেলা গেয়েন্দা শাখার এসআই মোবারক হোসেন এক বছর তদন্ত করে ইভা হত্যায়  জড়িতদের বের করতে ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিলে  তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদী আবারও আদালতে নারাজি আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে  ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার পিবিআই কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম মামলার তদন্ত শুরু করেন। গত ১১ জুলাই সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার  আলমপুর গ্রাম থেকে বাদির আপন ভাই (ইভার চাচা) আবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে  জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করে। পরে গত বুধবার আদালতে সোপর্দ করলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আবুল।

আসামি আবুল মিয়ার  জবানবন্দির বরাত দিয়ে  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন জানান,  প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই  দাদি বিরু বেগম ঘুমন্ত শিশু ইভাকে উঠানে রেখে দা দিয়ে কোপ দিতে বলে। তখন উঠানে তাঁর ভাই নিজাম ও রাশেদ উপস্থিত ছিল। আবুল ইভার গলায় কোপ দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। বিরু বেগম পানি ঢেলে ঘটনাস্থলের রক্ত পরিষ্কার করেন।

আসলাম উদ্দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এরই মধ্যে মামলার অন্যতম সাক্ষী আবদুল আজিজ ও ইভার দাদি বিরু বেগম মারা গেছেন। ইভার মা-বাবা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।