নৌকা দেখলেই ছুটছেন বন্যাদুর্গতরা

Looks like you've blocked notifications!
ঘরে খাবার নেই। ১০ দিন ধরে সেখানে বন্যার পানি। নৌকা দেখে শিশুসন্তানকে নিয়ে এভাবে ত্রাণের জন্য ছুটে আসেন এক নারী। কিন্তু সাংবাদিকের নৌকায় ত্রাণ না থাকার কথা জানালে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। ছবিটি আজ ১৫ জুলাই ২০১৭, বুধবার কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চর থেকে তোলা। ছবি : এনটিভি

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের। চরাঞ্চলগুলোতে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। নৌকা বা নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসছে বানভাসি মানুষজন।

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বানভাসি মানুষজন ১০ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে তারা। জেলার সাত উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক বানভাসি পরিবার ঘরের ভেতর উঁচু মাচা বেঁধে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। পাঠদান বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ১৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আরমান আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম জানান, সকাল থেকে এখনো রান্না করা হয়নি। ঘরে চাল নেই। তাঁর স্বামী বাকিতে চাল কিনতে বাজারে গেছেন। চাল না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে।

নৌকা দেখে কলার ভেলায় শিশুসন্তান নিয়ে ছুটে আসা একই চরের আরেক বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১০ দিন ধরে পানিবন্দি আছি। স্বামী কাজে যেতে পারেন না, কোথাও কাজ নাই। আপনাদের নৌকা দেখে মনে হলো ত্রাণের নৌকা এসেছে। এ জন্য এসে দেখি। কিন্তু আপনারা ত্রাণ নিয়া আসেন নাই। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়া ভেলার ওপর দিন পার করছি।’

এই বালাডোবা চরের শুধু সাহেদা ও আনোয়ারা বেগম নন, এ অবস্থা এখন এ চরের আকলিমা, মাজেদা, জেসমিন, রাশিদাসহ দুই শতাধিক পরিবারের। সাংবাদিকের নৌকা চরের কাছে ভিড়তেই ত্রাণের আশায় কলাগাছের ভেলা ও গলা পানি ভেঙে ছুটে আসতে থাকে বানভাসিরা। পরে নৌকায় কোনো সাহায্য নেই দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বন্যাদুর্গতদের অভিযোগ, এই চরে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে চার হাজারেরও বেশি পরিবার প্রায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এ পর্যন্ত যে বরাদ্দ পেয়েছি তা ৮৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ১৫০ পরিবারকে দিতেই শেষ হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ১২টি চরের সবগুলোতে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। নতুন করে বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।’

এ অবস্থা শুধু বালাডোবা চরেরই নয়, ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার সব চর ও দ্বীপচরের। কোথাও কোথাও ত্রাণের ১০ কেজি চাল ও শুকনো খাবারের একটি প্যাকেট জুটলেও পরিবারের পাঁচ থেকে ১০ জন সদস্যের জন্য খুবই কম।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৪০০ টন চাল, ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চার হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।