আতর, টুপি, জায়নামাজ ও তসবি কেনার ধুম
ঈদের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। ঈদের পোশাক কেনার পাশাপাশি আতর, টুপি, জায়নামাজ ও তসবি কেনার ধুম পড়েছে বাজারে। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে নামাজ আদায় করতে এসব পণ্য কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি মাকের্টে দেখা যায়, আতর ও বিভিন্ন রকমের টুপি কিনছেন ক্রেতারা। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। এসব পণ্য বিক্রির অন্যতম খুচরা বাজার হলো বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট। জুমার দিন নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের পাশাপশি ঈদের ক্রেতারা এখান থেকে কিনছেন। গুলিস্তান, মিটফোর্ড সুগন্ধি বাজার, নিউ মার্কেট, চক বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে আতর টুপি, জায়নামাজ ও তসবি। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি, ফুটপাত ও মৌসুমি হকাররা বিক্রি করছেন আতর টুপি আর নামাজ শিক্ষার বই। অলিগলির ছোট দোকনগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে ঈদের এসব অনুষঙ্গ। আবার পাড়া-মহল্লায় মসজিদের সামনে মাদুর পেতে টুপি, মেসওয়াক ও সুগন্ধি বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেককে।
টুপি
দেশি টুপির পাশাপাশি বাহারি নকশা আর আকৃতির বিদেশি টুপিও পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। নকশার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, চীনা টুপি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬০০, ভারতীয় টুপি ২০ থেকে ৬০০ এবং দেশে তৈরি টুপি ১০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি টুপির মধ্যে আসিফ জারদারি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, চিনের ওয়ানি ৫৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানিরা।
বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সবচেয়ে বৃহৎ টুপির দোকান বরকতীয় হাউসের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমদের দোকানে ক্রেতারা আসেন বিদেশি উন্নতমানের টুপি কিনতে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি টুপি হচ্ছে মালয়েশিয়ান মাহাথির টুপি। যার দাম পড়বে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা।’
বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা শফিউল্লা খান বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে টুপি বিক্রি ভালো হচ্ছে। এই সময়টায় ভালো লাভ হয়। মানুষ ঈদ ও রোজার মধ্যে তারাবির নামাজের জন্য টুপি বেশি কিনে থাকে।’
ঈদ বাজারে নিজের চাহিদা অনুসারে এসব পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারাও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে টুপি ও জায়নামাজ কিনতে আসা এক ক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। তাই ছেলেদের জন্য টুপি কিনছি।’
আতর
দাদার জন্য ভালো আতর কিনতে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে এসেছেন এনজিও কর্মকর্তা ফিরোজ কবীর। এক দোকানে সবচেয়ে ভালো মানের আতর চাইতেই সৌদি আরবের ‘উদ’ আতরের ছোট্ট শিশি হাতে তুলে দিলেন দোকানি। দাম হাঁকালেন এক তোলা ২০ হাজার টাকা।
দোকানদার নাজমুল হাসানের দাবি ‘উদ’ এবারের ঈদে আসা সবচেয়ে ভালো আতর। তবে দাম শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ টাকায় এক শিশি লর্ড আতর কিনলেন সাইফুল ইসলাম। দোকানির দাবি, লর্ড আতরও সৌদি আরবের তৈরি।
দোকানদার নাজমুল হাসান বলেন, ‘এবার বিদেশি আতরের চাহিদাই বেশি। বেচা-বিক্রিও অন্যবারের চেয়ে ভালো। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট থেকে আতর কিনছেন কলেজছাত্র মেহেদী হাসান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঈদের দিন বিশেষ দিন। আর ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আতর ব্যবহার করা সুন্নত। এ কারণেই আতর ক্রয় করছি।’
রাজধানীর আতরের দোকান ঘুরে দেখা যায়, ১০০ মিলিলিটারের সুলতান এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, আলফারেজ দুই হাজার টাকা, লর্ড আতর এক হাজার ২০০ টাকা, সিলভার এক হাজার ৮০০ টাকা, ওপেন এক হাজার ৫০০ টাকা, ইগুবস এক হাজার ৬০০ টাকা, বস এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ম্যাডার রোজ ব্র্যান্ডের আতর এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি শিশি সৌদির রয়্যাল ম্যারেজ ৫০ টাকা, ওয়ান ম্যান শো ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাফসাফা ২০০, দুবাইয়ের সুলতান ২২০ টাকা ভারতের কোবরা ২৫০ টাকা, বোম্বে দরবার ৩০০ টাকা, নূর ৩০০ টাকা এবং ইরানি গাউজ আতর ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০০ টাকায়। এর মধ্যে দরবার–কাঁচা ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মদিনা ৪০ এবং জান্নাতুল ফেরদাউস ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জায়নামাজের বাহারি নকশা
ঈদের সকালে নামাজে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ জায়নামাজ। এসব জায়নামাজেও যুক্ত নকশা আর কারুকাজ। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যেসব জায়নামাজ পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই বিদেশি তৈরি এবার পাকিস্তানে কোকার জায়নামাজ ৪৫০ থেকে ৬৫০, ন্যাশনাল ৪৫০ থেকে ৬০০, তুরস্কের আইরিন ৫০০ থেকে ৬০০, কাটারে নেওয়াজ ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে তৈরি গ্যাভার্ডিন কাপড়ের জায়নামাজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। জরির কাজ করা তুরস্কের আইরিন জায়নামাজের দাম চাওয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। কুষ্টিয়ার তৈরি জায়নামাজগুলো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন জায়নামাজ বিক্রেতা মো. ইয়াছিন। তবে বিদেশি জায়নামাজই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
কাঠ-পাথরের তসবি
প্লাস্টিকের পাশাপাশি কাঠ ও পাথরে তৈরি বিভিন্ন ধরনের তসবি পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। আকার ও উপাদান ভেদে দামেও পার্থক্য রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে আকিক পাথরের তৈরি তসবি ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, জমরুদ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, সোলেমানি পাথরের তসবি ৩০ থেকে ১৫০ টাকা, ক্রিস্টাল পাথরের তসবি ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি তসবি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানদাররা। এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের আসিফ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নামাজে আল্লাহর জিকির করার জন্য মানুষ তসবিহ কিনছে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে ভালো বিক্রি হচ্ছে।’ ঈদের আরেক অনুষঙ্গ সৌদি আরবের সুরমা। প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।