যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধর, পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইলে যৌতুকের দাবিতে এক নারীকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই নারীকে তিন দিন ধরে ঘরে আটকে রেখে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আর এসব অভিযোগের তীর যাঁর দিকে, তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা। নাম সৈয়দ আল মামুন। বর্তমানে তিনি খুলনার আদালতে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। কাল রোববার রাতে তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম শীলা মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন নড়াইলের লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও সৈয়দ আল মামুনের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
শীলার পরিবারের সদস্যরা জানান, সাড়ে চার বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দীঘলিয়া গ্রামের আবদুল মান্নান শরীফের মেয়ে শীলার সঙ্গে লোহাগড়া পৌরসভার কুন্দশী এলাকার সৈয়দ সিরাজ আলীর ছেলে সৈয়দ আল মামুনের বিয়ে হয়। বছরখানেক পর থেকেই শুরু হয় যৌতুকের দাবিতে শীলার ওপর নির্যাতন।
শীলার ভাই সাবু শরীফ বলেন, ‘প্রথমে আল মামুনকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এসআই থেকে পদোন্নতির কথা বলে এই টাকা নেন। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর আবার টাকার জন্য শীলার ওপর নির্যাতন শুরু করেন আল মামুন। এখন তিনি আদালতে যাওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে আমাদের টাকা দিতে বলেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার শুক্রবার রাতে রড দিয়ে পিটিয়ে বোনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। শীলা স্বামীর বাড়িতেই থাকত।’
খবর পেয়ে গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফাতেমাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শীলা জানান, যৌতুকের দাবিতে তাঁর স্বামী তিন দিন ঘরে আটকে রেখে রড দিয়ে পিটিয়েছেন তাঁকে। শুধু তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানেও নির্যাতন চালানো হয়েছে। একপর্যায়ে তাঁদের তিন বছরের শিশুসন্তান আরাফাতকেও লাথি মারেন আল মামুন। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন তিনি। সে কারণে চাইলেও সন্তানকে কাছে রাখতে পারছেন না বলে জানান শীলা।
শীলার মা নূরজাহান বেগম বলেন, আল মামুনকে মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকা দিয়েছেন তাঁরা। এরপরও লাথি মেরে, চোখে ঘুষি দিয়ে এবং রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁর মেয়ের জীবন প্রায় শেষ করে দিয়েছেন মামুন। এই নির্যাতনের বিচার দাবি করেন তিনি।
এদিকে হাসপাতালেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন শীলার বাবা আবদুল মান্নান শরীফ। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালেও আমার মেয়ের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছি না। জামাই হাসপাতাল ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
সৈয়দ আল মামুনকে হাসপাতাল এবং লোহাগড়া থানা এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ফাতেমার স্বজনরা। এমনকি পুলিশের কাছ থেকে যথাযথ সাহায্য পাননি বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
শীলার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ আবুল হাসনাত বলেন, ফাতেমার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহৃ রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।