বিতর্কিত ৪ ছাত্রলীগ নেতার নিয়োগে অসন্তোষ

Looks like you've blocked notifications!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিতর্কিত চার ছাত্রলীগ নেতা এবং কর্মকর্তার স্বজনসহ মোট ছয়জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের তিন নেতা নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত। 

গত মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক নিয়োগ-সংক্রান্ত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনার পাশাপাশি ছুটির পর প্রতিবাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগ কমিটির সভাপতিকে পাশ কাটিয়ে কেবল একক ক্ষমতাবলে এসব নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ঈদের ছুটির ঠিক আগমুহূর্তে এই নিয়োগকে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বজনদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে ঈদের ছুটির পর আবারো ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই এ নিয়োগ সম্পন্ন করা যেত বলে মনে করেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সৈয়দ জিন্নাহ, শিক্ষা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে সহসভাপতি রাজীব চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু, প্রক্টর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা নিয়োগ পেয়েছেন।
 
এ ছাড়া উপাচার্যের একান্ত সচিব মো. ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা খন্দকার নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের ক্যারিয়ার গাইডেন্স পদে এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সিনিয়র সর্টার মো. সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. আনু হানিফ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আছে। 
২০১৪ সালে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হন সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু। পরে অবশ্য দীপুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া দীপুর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলা এবং হলের ক্যান্টিন মালিককে মারধরের অভিযোগও রয়েছে। 

প্রক্টর অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হল শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামি। গত বছর ২৩ নভেম্বর সংঘটিত এ হামলার পর আশুলিয়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন আহত এক ছাত্রলীগ কর্মীর বাবা।

‘অ্যাডহক’ ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘এ নিয়োগ আমার অধীনে নয়। একক ক্ষমতাবলে উপাচার্যই অ্যাডহকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে ‘শিক্ষক মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছুটি শুরুর প্রাক্কাল তথা একেবারে ‘শেষ প্রহরে’ এ বিতর্কিত নিয়োগ দিয়ে তাঁদের অপরাধ প্রবণতাকেই প্রকাশ করেছে। অনিয়ম করতে করতে এমন অস্বাভাবিক কাজকেই স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দিচ্ছে তাঁরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তো জনগণের সম্পদ, এতে কোনো নিয়োগ দিতে হলেও অবশ্যই তার আগে ফলাও করে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ দিতে হবে।” তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু এখানে তা করা হয়নি, তাই ঈদের ছুটির পর আমরা প্রতিবাদে নামব।’ 

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরাও উপাচার্যের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যেহেতু এখানে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে। ঈদের পর আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব আমরা।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামছুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “অ্যাডহক ভিত্তিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঈদের পরে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তিনি আরো বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দিতে দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্য আমাদের কথা রাখেননি।’

এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। 

এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক খবির উদ্দিনের সভাপতিত্বে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে এ ধরনের নিয়োগ বাতিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহফুজই সাত্তার টিটু। এর পরও উপাচার্য তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে সভার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।