বিচারপতি খায়রুলের প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে : বিএনপি

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এনটিভির পুরোনো ছবি

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনীর আপিল বিভাগের রায়ের ‘সমালোচনা’ করেছেন বলে মনে করে বিএনপি।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরের পর আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদে আসা খায়রুল হকের এ ধরনের সমালোচনাকে তিনি ‘ভবিষ্যতে বড় পুরস্কারের আশায়’ ‘মনগড়া কথা’ বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন; যার লিখিত রূপ তিনি দিয়েছিলেন অবসরে যাওয়ার পর। বিএনপির অভিযোগ, এটা করে সেদিন খায়রুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোবাসনা পূর্ণ করেছিলেন।  

খায়রুল হকের উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনহীন এক ব্যক্তির দুঃশাসন চালু রাখতে সহায়তা করে দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করেছেন।... দেশের গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ খারাপ নজির স্থাপন করে গেছেন।... ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় যখন আদালতে প্রকাশ্যে পড়ে শোনান তখন বলেছিলেন, আরো দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অথচ এর ১৬ মাস পর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় লিখিতভাবে প্রকাশ করলেন, তাতে এই কথাটাই বাদ দিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন।’

‘তিনি (খায়রুল হক) চিফ জাস্টিস থাকা অবস্থায় একটি রায়ে বলেছিলেন, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অবসরের পরে লাভজনক কোনো পদে চাকরি করতে পারবে না। তিনি কত বড় ভণ্ড হলে নিজের রায়ের কথা নিজেই ভঙ্গ করেছেন’, প্রশ্ন তোলেন রিজভী।

বিচারপতিদের অভিশংসন-সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনীর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গত বুধবার আইন কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এর প্রধান খায়রুল হক। এ সময় তিনি রায়ের সমালোচনা করে বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় আগে থেকেই লিখে রাখা হয়েছে।’ ‘বিচার বিভাগ অপরিপক্ব’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় অগণতান্ত্রিক ও পূর্বপরিকল্পিত। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংবিধানের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি (খায়রুল) যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করেছেন। পরে এর পুরস্কারও পেয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে। ভবিষ্যতে হয়তো আরো বড় কোনো পুরস্কারের আশায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তিনি মনগড়া কথা বলেছেন।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।

এর পর গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

গত ১ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৭৯৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। সব বিচারপতির সর্বসম্মত রায়ে ‘রাজনীতিতে ব্যক্তিবাদ’, সামরিক শাসন, ‘অপরিপক্ব সংসদ’, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

এই পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর বিএনপি একে স্বাগত জানালেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা সমালোচনা করা হয়। যদিও গতকাল প্রধান বিচারপতি আবার বলেছেন, সরকার বা বিরোধী দল কারো ফাঁদেই পা দেবে না বিচার বিভাগ।

সর্বশেষ গতকাল সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ‘আবেগতাড়িত ও বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে সমালোচনা করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সমালোচনামুক্ত রাষ্ট্র থাকলে কিছু মানুষের সুবিধা। তাঁদের পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা হয়। খায়রুল হক তো সুশাসন-দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাইবেন না, তিনি একদলীয় হয়ে কাজ করেন।’

‘আর প্রধানমন্ত্রীসহ তাঁর দলের সবার মধ্যে আমিত্বের প্রভাব, শুধু তাঁরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে তো তাঁর পরিবারের কেউ অংশগ্রহণই করেনি, যুদ্ধের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ঢাকায় চাকরি করতেন। তিনিও তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। আর যাঁরা সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের অস্বীকার করছেন। তাঁরা এ দেশকে জনগণের দেশ মনে করে না’, যোগ করেন রিজভী।   

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহাবুবউদ্দিন খোকন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।