বন্যার শঙ্কা!

Looks like you've blocked notifications!

দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা। এরই মধ্যে কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের কিছু কিছু এলাকা এরই মধ্যে জলমগ্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

আজ শনিবার বিকেলে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উজানের তিনটি অববাহিকায় (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা) মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার ফলে বিগত তিনদিন থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে এই অববাহিকার নদীগুলোর ভারতীয় অংশে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ৫৫ সেন্টিমিন্টার, গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশে ১৬ সেন্টিমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১৫ সেন্টিমিটার এবং মেঘনা অববাহিকায় গড়ে এক মিটার করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেঘনা অববাহিকায় প্রধান-প্রধান নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলসহ বাঁধের বাইরে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অবনতিশীল থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

অপরদিকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৯০টি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ৮১টি পয়েন্টের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর হ্রাস পেয়েছে ছয়টি এবং দুটি পয়েন্টের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। একটি পয়েন্টের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০টি পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১৭ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ সময় ১৬টি পয়েন্টে ১০০ মিলিমিটার এবং ৩৮টি পয়েন্টে ৫০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ২০৫ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ১৮৭ মিলিমিটার, ডালিয়ায় ১৮৬ মিলিমিটার এবং ময়মনসিংহে ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এ সময় মনু নদীর মনু রেলওয়ে ব্রিজের পয়েন্টে ৩৬৮ সেমিমিটার, খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে ২২১ সেমিমিটার, খোয়াই নদীর হবিগঞ্জ পয়েন্টে ৪৭০ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর কমলগঞ্জ পয়েন্টে ২৭৮ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদীর নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে ৩২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মধ্য আগস্টে দেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছিলেন, ‘এবার দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সামনে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে তিনটি নদীর পানি বৃদ্ধি এবং অমাবস্যা হলে সাধারণত বাংলাদেশে বন্যা হয়। তাই আগস্টের মাঝমাঝি বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা রয়েছে।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন পানিসম্পদমন্ত্রী।

এদিকে আজ সকালে আগামী ৭২ ঘণ্টার (তিনদিন) আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে জানানো হয়েছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।

পাশাপাশি আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।