বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার রাজীব

Looks like you've blocked notifications!
মায়ের মমতা গাহনের সঙ্গে রাজীব গাইন। ছবি : এনটিভি

নিজের দেহটাকে যেন কিছুতেই টানতে পারছেন না ১৯ বছর বয়সী রাজীব গাইন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দেহের ভারও বেড়ে গেছে। সেই যে জন্ম থেকে বিরল রোগে আক্রান্ত তিনি!

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের মাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজীব। জন্মের সময় থেকেই তাঁর দেহে লক্ষণ দেখা যায়। তিন বছর বয়সে একবার সাতক্ষীরার চিকিৎসককে দেখানো হয়। কিছুদিন পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের কলকাতায়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ১০ বছর বয়সের পর আসতে বলেছিলেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। রাজীবের মা মমতা গাইন জানালেন,  ‘একবার ঢাকায় নিয়েছিলাম। কিন্তু রোগ ধরতে পারেনি ডাক্তার।’

পেট-পিঠজুড়ে টিউমার। রাজীব জানান, ভেতরে নরম, পানির মতো মনে হয়। মাঝে মাঝে দুই-একটা ছোট টিউমার ফেটে গেলে তীব্র যন্ত্রণা হয়। বাম হাত সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে তাঁর। হাতটি উঁচু করলে নিচের দিকে ভারী হয়। আবার নিচু করলেই হাতের শেষ প্রান্ত ভারী হয়ে ওঠে। কোনো ওষুধ খেলে তাঁর মাথা ঘোরে। এ কারণে ওষুধ খাওয়াও বন্ধ রয়েছে।

রাজীবের বাবা কার্তিক গাইন বাড়িতে মাদুর  তৈরি করে তা ঢাকায় বিক্রি করেন। এ কাজে সহায়তা করেন রাজীবের মা মমতা গাইন। ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমি নেই তাঁদের। এর মধ্য দিয়েই এ বছর জিপিএ ২.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন রাজীব। আর এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ ৩.০৬। এখন আর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও নেই তাঁর।

মা মমতা গাইন বলেন, ‘ছেলের সুস্থতার জন্য কোনো চিকিৎসা করাতে পারি না। এখন কী করে লেখাপড়া চালাব সেটাই আমাদের ভাববার বিষয়।’ তাঁদের পিতৃপরিবারে, এমনকি মাতুল পরিবারের কারো এ রোগ কখনো দেখা যায়নি বলে জানান মমতা। রাজীব কিছুদিন ধরে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন।

রাজীবকে দেখে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাসিরুদ্দিন বলেন, তাঁর HAEMANGIOMA (হেমাংজিওমা) অথবা LYMPHANGIOMA (লিমফাংজিওমা)  রোগ হয়েছে। তবে ঢাকায় নিয়ে মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরার  সিভিল সার্জন ডা. তাওহিদুর রহমান জানান, ছেলেটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব ডা. সিরাজুল ইসলাম তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।

রাজীবের মা-বাবা জানান, সরকারের সহায়তা ছাড়া তাঁদের ছেলের চিকিৎসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।