‘বন্যা কই, বন্যা কই?’ বলেই ইমরানের ওপর হামলা

Looks like you've blocked notifications!
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। ছবি: সংগৃহীত

‘সারা দেশে ভয়াবহ বন্যা। মানুষ মারা যাচ্ছে। তো আমরা এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি আর কর্মসূচি দিচ্ছি- ত্রাণ কার্যক্রমের। উত্তরাঞ্চলে আমরা ত্রাণ নিয়ে যাব। এর জন্য শাহবাগে ত্রাণ সংগ্রহ চলছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করেই একদল ছেলে বাঁশ, বড় বড় লাঠিসোটা-কাঠ, ইট-পাথর নিয়ে এসে অ্যাটাক করে। সমানে বাঁশ দিয়ে পেটাচ্ছে আর বলছে, বন্যা কই? বন্যা কই? দেশে কোনো বন্যা নাই। তোরাই এসব বন্যার গল্প বানাইছিস।’

এভাবেই আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে হামলার বর্ণনা দিচ্ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইমরান এইচ সরকার ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর পচা ডিম ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সারা দেশের বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারের দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করার সময় এই হামলা হয়।

ঘটনার বর্ণনায় ইমরান এইচ সরকার আরো বলেন, ‘হামলাকারীরা আমাদের পেটাচ্ছিল আর বারবার বলছিল- এসব তোদের বানোয়াট। তোরাই এসব ফেসবুকে লিখে লিখে বন্যার গল্প বানাইছিস। পরে আমাদের লোকজন ছিল, সাধারণ পথচারীরাও ছিল। সবাই মিলে যখন ধাওয়া করছে চলে গেছে।’

হামলাকারী কারা ছিল জিজ্ঞেস করলে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘তারা কারা এটা তো আমি বলতে পারব না। তারা তো পরিচয় দেয় নাই। আর আমি চিনিও না কাউকে। তবে যারা বিভিন্ন সময়ে হামলার হুমকি দিছে তারাই হবে। যারা বলছে পাইলে টুকরা টুকরা করবে, যারা বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিছে। এবং যারা এখনো ফেসবুকে বলে যাচ্ছে, না দেশে কোনো বন্যা নাই। কারা বলছে বলেন…। তারাই হবে। তার বাইরে কারা হবে?’

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ‘দেশে ১১০ জন মানুষ মারা গেছে বন্যায়। প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে পানি। অথচ তারা বলে যাচ্ছে বন্যা কোথায়! আমরাই নাকি বন্যার গল্প বানাইছি। আমরাই নাকি বন্যার গল্প ছড়াইছি।’

এ হামলায় চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইমরান। এর মধ্যে রিয়াজুল আলম নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া সোহাগ নামে একজন ভালো আঘাত পেয়েছেন বলে ইমরান উল্লেখ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইমরান এইচ সরকার। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন নেতাকর্মী তাঁর সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ একদল লোক জড়ো হয়ে তাঁর ওপর ডিম ও ইটের আধলা মারতে শুরু করে। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজনের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন পক্ষের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এই হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা পকেটে করে পচা ডিম ও ইটের টুকরা নিয়ে ইমরান ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁর ওপর বেশ কয়েকটি পচা ডিম নিক্ষেপ করা হয়।

তবে মাসুদ লিমনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পচা ডিম মারার বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে এ কাজটি কে করেছে তা আমার জানা নেই।’

হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘আমরা শাহবাগের মোড়ে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। তখন কিছু ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগে তারা আমাদের গায়ে বিভিন্ন বস্তু ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরবর্তীতে আমাদের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।’

চলতি বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ইমরান এইচ সরকারকে পেটানোর ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই তাঁকে পিটিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। এরপর গত ১৬ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত চত্বরে ইমরান এইচ সরকারের ওপর ডিম ও জুতা মারার ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে করা মানহানির মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে আদালতে গিয়েছিলেন ইমরান ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী সনাতন উল্লাস। এ সময় তাঁদের দুজনের ওপরই হামলা চালানো হয়।

ইমরান এইচ সরকার তখন অভিযোগ করেছিলেন, কেবল ডিম নয়, তাঁর গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মেরেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে মামলার বাদী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ডিম ছোড়ার ঘটনাটি স্বীকার করলেও ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।