পাবনায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

Looks like you've blocked notifications!

পদ্মা ও যমুনা নদীর শাখা বড়াল, গুমানি ও চিকনাই নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে পাবনার পাঁচটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এরই মধ্যে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান জানান, এ উপজেলার দিলপাশার ও খান মরিচ ইউনিয়ন বড়াল ও গুমানি নদীর পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে। চলনবিলের পানি অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

চাটমোহরের ইউএনও শেহেলী লায়লা জানান, উপজেলার নিমাইচড়া, হান্ডিয়াল ও ছাইকোলা ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এ উপজেলার ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বেড়ার ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম জানান, যমুনা তীরবর্তী বেড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এগুলো হলো- নাকালিয়া, হাটুরিয়া নাকালিয়া, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, রূপপুর, ঢালারচর ও মাসুমদিয়া ইউনিয়ন।

এ ছাড়া বেড়া পৌরসভার আংশিক বন্যাকবলিত হয়েছে। বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ এম রফিকউল্লাহ জানান, তাঁর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড বাদে সবগুলো বন্যাকবলিত। যমুনা তীরবর্তী রঘুনাথপুর, মধুপুর, যদুপুর, খানপুরা, প্রতাপপুর এবং যমুনার ওপারে সবগুলো চর পানিতে ভাসছে। বন্যা নিয়ে বেড়ার ইউএনওর সভাকক্ষে সব ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারি নগর, ডেমরা, বিএলবাড়ি, পুঙ্গলী ইউনিয়নের পুরো এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এ উপজেলায় ১৯টি প্রাথমিক, চারটি মাদ্রাসা ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পাবনার সুজানগরে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীর পাশের চারটি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি। পাশাপাশি বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন করে পাকা করা নাংহাটি-রাইপুর ডিসি সড়ক।

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নের আট-দশটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিন ১০-১২ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে পানি বৃদ্ধির ফলে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নারুহাটি, ফকিৎপুর, তারাবাড়িয়া নতুনপাড়া, জামাইপাড়া, গুপিনপুর ও নিশ্চিন্তপুর; মানিকহাট ইউনিয়নের মাছপাড়া, রাইপুর ও মালিফা; নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের ইন্দ্রজিতপুর, কামারহাট, নওগ্রাম, উদয়পুর, মহনপুর, মহব্বতপুর, হাসামপুর ও বরকাপুর এবং সাগরকান্দি ইউনিয়নের হুগলাডাঙ্গী, শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, চরখলিলপুর, তালিমনগর ও মান্দিয়ারকান্দি এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গৃহপালিত পশু রাখার অসুবিধাসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া বন্যার পানিতে সাগরকান্দি ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শত শত একর বোনা আমন, আউশ ও সবজি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে সাগরকান্দি ইউনিয়নের তালিমনগর শাহ মাহতাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, তালিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাগরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহব্বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডুবে গেছে।

পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় সব ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’